চিফ রিপোর্টার- অর্পণ ভট্টাচার্য্য
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৬০১টি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ এর কম! ঝাড়গ্রামে ৪৭৯টি স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ৩০ এর কম! আর গোটা পশ্চিমবঙ্গে তেমন স্কুলের সংখ্যাটি ৮২০৭! সম্প্রতি রাজ্য সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের তরফে প্রকাশিত তালিকা দেখে চোখ কপালে উঠেছে শিক্ষা মহলের। প্রশ্ন জেগেছে, কি ভবিষ্যৎ এই সরকারি স্কুলগুলির! তবে কি সরকারি স্কুলে শিক্ষা এবার বন্ধের মুখে!
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের মোদপুকুর জুনিয়র হাই আপার প্রাইমারি, সবং এর সুন্দরপুর জুনিয়র হাইস্কুল, বীরকোটা জুনিয়র হাইস্কুল, খড়গপুরের হৈমবতী প্রাইমারি, দাঁতনের বামনডা প্রাইমারি, ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের ছাতিনাশোল জুনিয়র হাইস্কুল (গার্লস), নয়াগ্রামের পাঁচকাহনিয়া জুনিয়র হাইস্কুল ইত্যাদি ইত্যাদি। স্কুলগুলির মধ্যে একটি মিল আছে, প্রত্যেকটিতেই ২০২৩ সালের হিসাবে পড়ুয়ার সংখ্যা শূন্য! এইরকম শূন্য পড়ুয়া সংখ্যা বিশিষ্ট শুধুমাত্র জঙ্গলমহলের জেলাগুলির স্কুলের নামগুলি লিখলেই প্রতিবেদন ভরাট হয়ে যাবে। সম্প্রতি সরকারি স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার অভাব নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। এখন খোদ শিক্ষা দফতরের তথ্যেই বোঝা যাচ্ছে বাস্তব চিত্রটি। অভিভাবক অভিভাবিকাদের অভিযোগ উৎসশ্রী প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকেই সুবিধাজনক স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকারা বদলি হয়ে যাওয়ায়, অনেক স্কুলের পঠনপাঠন নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। ফলে স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পড়ুয়ারা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আমলে বদলির জন্য উৎসশ্রী পোর্টাল চালু হয়। সেই পোর্টালেও বদলির ক্ষেত্রে বহু দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে শিক্ষক শিক্ষিকা ও অনেক শিক্ষাবিদের ব্যাখ্যা, রাজ্যের কলকাতা শহর ও বিভিন্ন জেলার মফস্বল গুলিতে বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলগুলির বাড়বাড়ন্ত এবং এক শ্রেণির অভিভাবকদের বেসরকারি স্কুলের প্রতি আস্থার কারণে সরকারি স্কুলে ছাত্রছাত্রী কমেছে অস্বাভাবিক হারে।
এখন শিক্ষামহলে প্রশ্ন উঠেছে ৮,২০৭টি স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে৷ অনুমান করা হচ্ছে, পড়ুয়ার অভাবের কারণে বন্ধ হয়ে যেতে পারে স্কুলগুলি৷ সম্ভবত এই স্কুলগুলিতে কর্মরত শিক্ষক শিক্ষিকাদের অন্যান্য স্কুলে বদলি করা হতে পারে। অন্যদিকে শিক্ষাবিদদের একাংশের মত সরকারি স্কুলগুলিতে পাঠনপাঠনের মানোন্নয়ন আশু প্রয়োজন৷ অন্যথা ভবিষ্যতেও একই ঘটনার সম্ভাবনা দেখা যেতে পারে। আর সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়লে আর্থিকভাবে অনগ্রসর ও প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়াদের শিক্ষাগত ভবিষ্যৎ প্রশ্ন চিহ্নের মুখে পড়বে৷