✍️ তপনকান্তি মাহাতো
কানাইশরের পাহাড় পূজা, মেলা কবে কোন কালে শুরু হয়েছিল সেসব না গবেষকেরা খোঁজ করুক, ওসব আমার কম্মো না। বেলপাহাড়ীর পাহাড়, ডুংরি ওখানকার মানুষগুলি আমার ভালোবাসার, তাই সময় সুযোগ পেলেই তাদের কাছে ছুটে যাই বার বার। আজ ছিল ওখানকার কানাইশর পাহাড়ের পূজা উপলক্ষে মেলা। যে মেলার জন্য প্রান্তিক মানুষগুলো সারা বছর প্রতীক্ষা করে থাকে সেই পাহাড় পূজার মেলা।
না, আমার যাওয়াটা কোন পূর্ব পরিকল্পিত ছিল না। আজ সকালেই ভাই কাজলের সাথে গল্প করতে করতেই দুজনে ঠিক করি, ‘চল্! পাহাড়পূজার মেলাতে যাই।’ সকাল দশটাতে বাইক ছুটিয়ে বারোটাতে কানাইশর পাহাড়ের মেলায় পৌঁছাই। রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজে কাদামাখা পথে জল কাদা ছিটিয়ে বাইক চালানো, পৌঁছে বাইকস্ট্যান্ডে বাইক রেখে প্যাচপ্যাচে কাদা মাড়িয়ে পুরো ভিড়ের সাথে হুল্লোড় করে পাহাড়ের মেলায়। এই মেলা এখনো সেই আদি, অকৃত্রিম থাকতে পেরেছে অনেকটাই। আদি জনজাতির মানুষরাই ভিড় করেছে মেলায়, পূজাও সেই প্রকৃতির পূজা, পূজার লায়াও(পুরোহিত) সেই জনজাতির মানুষ। বৃষ্টি কাদার মাঝেই নানান দোকানদারি, মদ, হাঁড়িয়ার জমজমাট আসর, ভিড় ভিড় মেলা জমে ক্ষীর। অল্পবয়সীরা দলে দলে হুল্লোড় করে পাহাড়ের সরু পিছল পথ বেয়ে পাহাড়ের উপরে চলেছে, মেয়ে বউরা ভিড় করে পূজা দিচ্ছে, কেউ কেউ মানত করা পাঁঠা উৎসর্গ করছে। গোটা মেলা আদি সোমরস আর পাকা কাঁঠালের গন্ধে ম ম করছে।
দু-তিন ঘন্টা এই সবের মাঝে কাটিয়ে তিনটের সময় আবার ফেরার পথে বাইক ছোটাই। না, মশাই! আমি বুড়ো হতে রাজি নই। তাই ভিজে ভিজেই মেলায় ঘুরে বন জঙ্গলের ভেজা মানুষের গন্ধ, আদি সোমরসের গন্ধ, কাঁঠালের গন্ধের মাঝে মেলার আনন্দ ঊচ্ছ্বাস মেখে আয়ু বাড়িয়ে বাড়ি ফিরলাম।