নিজস্ব প্রতিনিধি: এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। তবু হল। পেশায় আইনের শিক্ষিকা। তবু কল্যাণী থেকে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা- মোঙ্গলাপোতা। ক্রমাগত লেগে রয়েছেন হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস পুনরুদ্ধারের নেশায়। সুস্মিতা হালদার চাইছেন, হারিয়ে যাওয়া লায়েক বিদ্রোহের ইতিহাস তুলে আনতে ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সংস্কার ও সংরক্ষণ।
ব্রিটিশবিরোধী কৃষক অসন্তোষ বললে উঠে আসে লায়েক বিদ্রোহের নাম। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে অচল সিংহ। এর সঙ্গে নাম উঠে আসে তৎকালীন জমিদার ছত্র সিংহের। এই ইতিহাস মুখে মুখে ফেরে অনেকের ঠিকই, তবে তা অনেকটাই জনশ্রুতি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে না লেখা ইতিহাসের বিকৃতি হয়ে যায়। সেই হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসকেই তুলে ধরতে চান সুস্মিতা। আইনের শিক্ষিকা চাইছেন ঐতিহ্যশালী ধ্বংসাবশেষকে আগলে রাখতে। তাঁর আবেদন, প্রাচীন স্থাপত্যের সংস্কার ও সংরক্ষণ হোক। খাতায়-কলমে দেওয়া হোক হেরিটেজ ও প্রত্নতাত্ত্বিক মর্যাদা। বিশেষ বিশেষ জায়গা চিহ্নিত করে করা হোক খননকার্য।
গড়বেতা, মোঙ্গলাপোতা ও সংলগ্ন অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বহু প্রাচীন নিদর্শন। তবে তা সবই রয়েছে অবহেলায়। বছরের পর বছর তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েই চলেছে। মঙ্গলাপোতা রাজপরিবার চায় হেরিটেজ মর্যাদা পাক রাজবাড়ী। সর্বমঙ্গলা মন্দির কমিটি চায়, হেরিটেজ ঘোষণা করা হোক মন্দিরকে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মন্দিরের হেরিটেজ মর্যাদার জন্য আবেদন জানিয়েছেন মন্দির কমিটির সদস্যরা।
সুস্মিতা চাইছেন, ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সংস্কার, সংরক্ষণ, বিশেষ বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে খননকার্য। তাঁর আরও আবেদন, গড়বেতা- মোঙ্গলাপোতাকে হেরিটেজ জোন হিসেবে মান্যতা দেওয়া হোক, হেরিটেজ সার্কিট মানচিত্রে স্থান পাক এই অঞ্চল। সমগ্র এলাকার ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছেন সুস্মিতা। তাঁর আবেদন ১৪ দফা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমগ্র অঞ্চল জুড়ে রয়েছে জীর্ণ মন্দির, বাড়ি, সুড়ঙ্গ, ধ্বংসস্তূপ। ঐতিহ্যশালী স্থাপত্যগুলিকে রাজ্য প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ ও রাজ্য হেরিটেজ কমিশন খাতায় কলমের মর্যাদা দিক। ইতিমধ্যে একাধিক জনপ্রতিনিধি, আধিকারিক সহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
লায়েক বিদ্রোহের ওপর একটি বইও প্রকাশিত হবে তাঁর। সুস্মিতা বলেন, এলাকা পরিদর্শনে আসুক দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা। রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে ব্রিটিশ বিদ্রোহের পীঠস্থান গড়বেতা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ড্রিম প্রোজেক্ট গড়বেতায় পর্যটনকেন্দ্র। আর এই পর্যটন কেন্দ্র থেকেই সামান্য দূরত্বে ঐতিহাসিক একাধিক স্থাপত্য রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। সুস্মিতা বলেন, খাতায়-কলমে প্রত্নতাত্ত্বিক ও হেরিটেজ মর্যাদা পেলে, সমগ্র এলাকাটিকে হেরিটেজ জোন হিসেবে মান্যতা দেওয়া হলে এবং হেরিটেজ সার্কিটে (HERITAGE CIRCUIT) এই অঞ্চল স্থান পেলে রাজ্যের মুকুটে যুক্ত হবে আরও একটি নতুন পালক। যেই ঐতিহ্য জেলা, রাজ্য তথা সমগ্র দেশের। বেশ কিছু জায়গা চিহ্নিত করে খননকার্যের আবেদনও জানিয়েছেন তরুণী।