গত ২৪ ঘন্টায় এমন ঘটনা পরম্পরার সাক্ষী পশ্চিমবঙ্গ বোধহয় আগে থাকেনি। একদিকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে সিবিআই হাজিরার নির্দেশ দিচ্ছে হাইকোর্ট। জমা পড়ছে ফের আবেদন, তা খারিজ হচ্ছে। মেয়েকে অবৈধভাবে শিক্ষিকার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠা মন্ত্রী সিবিআই হাজিরা এড়িয়ে উধাও হচ্ছেন। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিচ্ছেন। চাকরিতে অনিয়ম সংক্রান্ত তথ্য আদালতে পেশ করার পরদিনই বদলে যাচ্ছেন এসএসসি চেয়ারম্যান। মাঝরাতে আদালতে আবেদন জমা পড়ছে এসএসসি দফতরে তথ্য লোপাটের আশঙ্কায়। রাতেই হচ্ছে ভার্চুয়াল শুনানি। আদালতের নির্দেশে ডাক পড়ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর। মাঝরাতে এসএসসি দফতরে গেট টপকে ঢুকে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করছে সিআরপিএফ জওয়ানরা। এক অসাধারণ প্লট বয়লার! মশলাদার দক্ষিণী ছবি দেখার অনুভূতি জাগবে।
স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দেন হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। অন্যথা হলে হেফাজতে নেওয়া যাবে বলেও জানিয়ে দেয় বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেও বিফল হন পার্থ। আবেদন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে আবেদন শোনেননি বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তর বেঞ্চ। বাধ্য হয়ে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সিবিআই দফতরে যান পার্থ। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ। এবার বৃহস্পতিবার আদালতে ফের আবেদনের পর মামলা থেকে অব্যাহতি নিলেন বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্ত।
অন্য দিকে কন্যা অঙ্কিতাকে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে শিক্ষিকার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেখলিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার আদালতের কাছে এসএসসি চেয়ারম্যান তথ্য দেন কম নম্বর পেয়েও চাকরি পেয়েছেন অঙ্কিতা। ঐদিন রাতেই প্রেস অধিকারীকে সিবিআই দফতরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ঐ দিন রাতে উপস্থিত হতে না পেরে পদাতিক এক্সপ্রেসে বুধবার ভোরে সকন্যা বর্ধমান আসেন মন্ত্রী। কিন্তু বিকাল থেকেই তিনি নিখোঁজ। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত হাজির হননি সিবিআই দফতরে। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে সিবিআই আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করানোর পর সিবিআইকে মামলার নোটিস পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। মন্ত্রী কন্যার চাকরি সংক্রান্ত তথ্য আদালতে জানানোর পরেই বুধবার বদল এসএসসি চেয়ারম্যান পদে। তথ্য নষ্ট করা হতে পারে এই আশঙ্কায় এসএসসি অফিসে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আবেদন জানিয়ে বুধবার রাতে আদালতে জমা পরে শুনানির আবেদন। প্রধান বিচারপতির বিশেষ অনুমতি নিয়ে মাঝরাতে শুনানি শোনেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার মধ্যে এসএসসি-র সচিবকে সিসিটিভি ফুটেজ আনার নির্দেশ দেন তিনি। সেই সঙ্গে রাত থেকে ঐ সময়কাল পর্যন্ত এসএসসি দফতরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয় সিআরপিএফ-কে। রাত ২টো ৫০ মিনিটে সিআরপিএফ পৌঁছে যায় আচার্য সদনে। অভিযোগ, গেট বন্ধ ছিল। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর গেট টপকে ভিতরে প্রবেশ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
এই সব ঘটনা পরম্পরার রেশ বজায় থাকছে বৃহস্পতিবারও। সমস্ত মামলাগুলোর শুনানি রয়েছে এইদিন। এখন বিষয়, তদন্তের গতিপ্রকৃতি ও আদালতের নির্দেশ নতুন কি ঘটনা পরম্পরার সৃষ্টি করে।