ভারতের কার্গিল যুদ্ধ জয় অনেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। তার অন্যতম ভারতীয় সৈনিকদের আত্মত্যাগ ও অসীম বীরত্ব। এই অনেকের মধ্যেও কয়েকজনের একক প্রচেষ্টা ও অসাধারণ কীর্তি যুদ্ধজয়কে নিশ্চিত করেছিল। তেমনই একজন সুবেদার মেজর যোগেন্দ্র সিং যাদব।
মাত্র ১৬ বছর ৫ মাস বয়সে ভারতীয় সেনায় যোগ দেন যোগেন্দ্র সিং যাদব। যুক্ত হন ১৮ গ্রেনেডিয়ারের সঙ্গে। কার্গিল যুদ্ধে রেজিমেন্টের ঘাতক দলেরর কম্যান্ডো প্লাটুনের অংশ হিসাবে তাঁদের দলকে টাইগার হিলের তিনটি কৌশলগত বাঙ্কার দখল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৯ সালের ৪ঠা জুলাই ভোরবেলা একটি উল্লম্ব, তুষারে ঢাকা, ১০০০ ফুট পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত বাঙ্কারগুলির দখল অভিযানে যাদব স্বেচ্ছায় আক্রমণের নেতৃত্ব দেন।
তিনি সেই উলম্ব খাড়াইয়ে প্রথম আরোহণ করেন এবং দলের বাকিদের জন্য দড়ি ঝুলিয়ে দেন। অর্ধেক উপরে যাওয়ার পর একটি শত্রু বাঙ্কার থেকে মেশিনগান এবং রকেট ফায়ার আসে তাঁদের দলকে লক্ষ্য করে। প্লাটুন কমান্ডার এবং অন্য দু’জন তার আঘাতে শহীদ হন। যাদবের কুঁচকি এবং কাঁধে একাধিক গুলি লাগে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, যাদব অবশিষ্ট ১৮ ফুট আরোহণ করেন। গুরুতর আহত হলেও, তিনি প্রথম হামাগুড়ি দিয়ে শত্রু বাঙ্কারের কাছে পৌঁছে গ্রেনেড ছোড়েন, চার পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করেন। ফলে প্লাটুনের বাকি সদস্যরা পাহাড়ের উপরে উঠে আসেন।এরপর দুই সহকর্মী সৈন্যের সাথে বাঙ্কারে হাতাহাতি যুদ্ধে ৪ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করেন। ফলে টাইগার হিল দখল সফল হয়।
যাদব ১২টি গুলিতে বিদ্ধ হয়েছিলেন। তবুও রণাঙ্গনে অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনেন। তাঁর এই কৃতিত্বের জন্য যোগেন্দ্র সিং যাদবকে সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান পরমবীর চক্র প্রদান করা হয়। মাত্র ১৯ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ সৈনিক হিসাবে তিনি এই সম্মান পান। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর অনারারি ক্যাপ্টেন হিসাবে সুবেদার মেজর যোগেন্দ্র সিং যাদব ভারতীয় সেনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।