বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি উত্তাল হয়ে উঠেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা শহরের রাজপথ। আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ফলে আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান শহিদ হন। এরপরে এই বর্ষব্যাপী অন্দোলন, বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, মুক্তি আন্দোলন, বাংলাদেশের জন্ম প্রভৃতি ঘটনা পরম্পরা। ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ঘটনাকে স্মরণ করে সারা পৃথিবী জুড়ে মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় এইদিন।
তবে বাংলা ভাষার জন্য এমন আন্দোলন ঘটেছিল ভারতের বুকেও। বরাক উপত্যকার ১৯৬১ সালের ১৯ মে এর আন্দোলন এবং মানভূম জেলার ভাষা আন্দোলন। স্বাধীনতার সময় অসমে প্রায় ২০ লক্ষ বাঙালির বাস ছিল। অভিযোগ ওঠে ১৯৫১ সালের জনগণনায় বাঙালির সংখ্যা অনেক কম দেখিয়ে শিক্ষা, চাকুরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাঙালিদের বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ ১৯৬০ সালের ১০ অক্টোবর অসমীয়া ভাষাকে অসমের একমাত্র সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। প্রতিবাদে বরাক উপত্যকায় বাংলাভাষীরা প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬১ সালের ১৯ মে অসম সরকারের পুলিশ সত্যগ্রহীদের উপর গুলি চালায়। মৃত্যু হয় ১০ জনের। পরিশেষে অসম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার অধিকারকে মান্যতা দিতে বাধ্য হয়।
মানভূম জেলার ভাষা আন্দোলনের বিস্তৃতি স্বাধীনতার আগে থেকে। ১৯১২ সালে বঙ্গভঙ্গের সময়ে বাংলাভাষী মানভূম জেলাকে বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিহার ও ওড়িশার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলেও মানভূম জেলা বিহার ও ওড়িশার মধ্যেই থেকে যায়। এর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আগে অনেক আন্দোলন, প্রতিবাদ, পিটিশন চলে৷ যা প্রধানত স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত ছিল। স্বাধীনতার পর মানভূমের বাংলা ভাষা প্রধান অঞ্চলে হিন্দি ভাষার প্রচার চালানোর অভিযোগ ওঠে বিহার সরকারের বিরুদ্ধে। এটিকে হিন্দি জেলা হিসেবে ঘোষণার পরেই মানভূমে আন্দোলন সংঘটিত হয়। কংগ্রেস দল ত্যাগ করে এবং ১৯৪৮ সালে লোকসেবক সঙ্ঘ নামে নতুন একটি দল গঠন করে আন্দোলনে নামেন সেখানকার কংগ্রেস নেতারা। অতুলচন্দ্র ঘোষ, বিভূতিভূষণ দাশগুপ্ত, অরুণচন্দ্র ঘোষ, লাবণ্যপ্রভা দেবী, ভজহরি মাহাতো, ভীমচন্দ্র মাহাতো প্রমুখের নেতৃত্বে আন্দোলন সংঘটিত হয়। ভাষা সত্যাগ্রহ, বিধানসভা ও লোকসভায় সাংবিধানিক পদ্ধতিতে আন্দোলন, টুয়ু সত্যাগ্রহ, রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন ও রাজনৈতিক আন্দোলন এবং বঙ্গভঙ্গ সত্যাগ্রহ অভিযান প্রভৃতি আন্দোলন চলে। এরপর রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে মানভূম জেলাকে দ্বিখণ্ডিত করা হয় এবং পুরুলিয়া সদর মহকুমার ১৬টি থানাকে নিয়ে পুরুলিয়া নামে নতুন একটি জেলা তৈরি হয়। ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর পুরুলিয়া জেলা পশ্চিমবঙ্গে যুক্ত হয় এবং ধানবাদ মহকুমা সহ বাকি অঞ্চলগুলি বিহারে থেকে যায়।