প্রকৃতিতে সমস্ত নির্জীব প্রাণিদের সাথে বিবেচনায় মৌমাছিদের জীবনব্যবস্থা অনেকটাই উন্নত। তাদের জীবনচক্রে রয়েছে সুষ্ঠু সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র, নির্দিষ্ট আচার-ব্যবহার, বাচনভঙ্গি, গোত্রভেদ। এই রাজতন্ত্রে প্রজা মৌমাছিদের বিদ্রোহও সংঘটিত হতে দেখা যায়। পরস্পরের সাথে যোগাযোগের জন্য রয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের এক মাধ্যম। তবে সবথেকে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, মৌমাছিদের কলোনীতে অবস্থানরত একমাত্র উর্বর মৌমাছি; একটি রানী মৌমাছি।
মৌমাছি নষ্ট ফুল থেকে মধু আহরণ করে না। তারা পরিষ্কার ও অব্যবহৃত ফুল থেকেই মধুর উপাদান সংগ্রহ করে থাকে। মানুষের উচিত পবিত্র রিজিক গ্রহণ করা। হারাম রিজিক ভক্ষণের মধ্যে কোনো বরকত থাকে না।
মৌমাছি খুবই পরিশ্রমী পতঙ্গ। ফুলের রস মুখে নিয়ে, সেটা থেকে জলীয় অংশ দূর করে শতভাগ ভেজালমুক্ত এক ফোঁটা মধু তৈরি করতে যে শ্রম ও সময় ব্যয় করে সেটা বিস্ময়কর! এক পাউন্ড মধু বানাতে ৫৫০ মৌমাছিকে প্রায় ২০ লাখ ফুলে ভ্রমণ করতে হয়! আবার এক পাউন্ড মধু সংগ্রহ করতে একটি কর্মী মৌমাছিকে প্রায় ১৪.৫ লাখ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়! যা দিয়ে পৃথিবীকে তিনবার প্রদক্ষিণ করা সম্ভব! ফুলের সন্ধানে প্রতিটি মৌমাছি, মৌচাকের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসের পুরো এলাকা তারা তন্ন তন্ন করে ঘুরে বেড়ায়! তাদের ওড়ার গতি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৪ কিলোমিটার। একটি সক্ষম মৌমাছি দৈনিক ১০ কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দিতে পারে। মানবসন্তান যখন চামচে ভরে মধু পান করে তৃপ্ত বোধ হয়, তখন সে ভাবে না যে এই এক চামচ মধু সৃষ্টিতে কত শত মৌমাছির রক্তক্ষয়ী অবদান লুকিয়ে আছে!
একটি কর্মী মৌমাছির ৩৯-৪২ দিনের ছোট্ট জীবনে নিজেদের সঞ্চিত মধু পান করার সৌভাগ্য খুব কমই হয়!
মৌমাছির এই ত্যাগের শিক্ষা মানুষ ধারণ করলে পৃথিবীর চেহারা বদলে যেত। ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব পতঙ্গের মজুদ করা মধু বিভিন্ন প্রাণী চুরি করে পান করে। মানবজাতিও পরম তৃপ্তিতে মধু পান করে। মধু পানের সময় মৌমাছির ত্যাগের কথা তারা ভুলে যায়। ভুলে যায় মৌমাছির স্রষ্টাকেও!