বাংলার সাংস্কৃতিক আঙ্গিকে ভাষার প্রয়োগ, বিশেষত সম্বোধনের প্রকারভেদ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বহুকাল থেকেই। রাজনৈতিক সহকর্মী আরও নির্দিষ্ট ভাবে বললে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি প্রযুক্ত ভাষা রাজ্যের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের বিচারে বিশ্লেষণাত্মক হয়ে পড়ে। কিন্তু বিগত সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তৃতায়, মন্তব্যে রাজনৈতিক সহকর্মী ও প্রতিপক্ষের প্রতি বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীদের শব্দচয়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। রাজ্যের একাধিক রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের বক্তৃতা অনেকক্ষেত্রে শালীনতাও লঙ্ঘন করেছে। এবার সেই সূচিতে নুতন সংযোজন হিসেবে সৌমিত্র খাঁ-এর সমাজমাধ্যমে সাম্প্রতিকতম কমেন্টকে উল্লেখ করেছেন অনেকেই।
সম্প্রতি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ যুব মোর্চার প্রেসিডেন্ট তথা এমপি পোস্ট করেন, “আমার এমএলএ এবং ২ টাইমস এমপি বেতনের ৫০% টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় রাখতে পারিনি। আমার নিজের বেতন যদি রাখতে পারতাম তাহলে আমার অনেক টাকা হতো তাই চ্যালেঞ্জ রইলো!” তাঁর এই পোষ্ট আসলে কি উদ্দেশ্যে তিনি তা খোলসা না করলেও পোষ্টের পরেই কমেন্ট সেকশনে শুরু হয়ে মন্তব্যের ঝড়। সেখানেই একজন নেটাগরিক মন্তব্য করেন, তাঁর বালির টাকা একাধিক ভক্তদের কাছে রাখা নিয়ে। এরপরেই সৌমিত্র খাঁ তীব্র ভাষায় সেই নেটাগরিককে পাল্টা আক্রমণ করেন। ‘তুই’ সম্বোধন করে সেই টাকা মন্তব্যকারীর ‘বাপের’ তথা পিতৃদেবের কাছে রেখেছেন বলে জানান তিনি।
এই মন্তব্য নেটমাধ্যমে প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বা বিনোদন জগতের খ্যাতিমানদের সমাজমাধ্যমের প্রোফাইলে বিরূপমন্তব্য চোখে পড়ে। অনেকে এড়িয়ে যান, অনেকে শালীনতা বজায় রেখে প্রতিবাদ করেন, অনেকে আবার আইনের দ্বারস্থও হন। কিন্তু বিগত কিছু সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন বিরূপ বা আক্রমণাত্মক মন্তব্যের ক্ষেত্রে অসহিষ্ণু হয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে। অনেকে বলছেন, সৌমিত্র খাঁ এর পাল্টা মন্তব্য সেই অসহিষ্ণুতারই নিদর্শন। আবার অনেকে রাজ্যের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বক্তব্যে ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠা সাংস্কৃতিক ও ভাষার দৈন্যকেই নির্দেশ করছেন। সেই সঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, এই ‘নব্য’ ভাষা সংস্কৃতিই ক্রমশ বাংলার রাজনৈতিক আবহকে বিজ্ঞাপিত করবে।