অনেকেই নিজের ছাদ বাগানে সুন্দর ফুলের চাষ করতে চান | অনেকেরই চাষের উপজোদি জমি থাকেনা, কিন্তু বাড়ির ছাদে বা বাগানে টবে ফুল চাষ অনায়াসে করা যায় | টবে ফুল চাষের কিছু নিয়ম থাকে আবার টবে ফুল চাষে অনেক সুবিধাও থাকে |
টবের উপযোগী গাছ:
প্রথমত, বৃক্ষজাতীয় দীর্ঘজীবী ফুলগুলো টবে রোপণ না করাই ভালো। বিভিন্ন মৌসুমী ফুল টবের চাষের জন্য সবথেকে ভালো। তবে যে ফুলগাছই রোপণ করা হোক না কেন, সেগুলো যেন রোদ পায়। একটু পরিকল্পনা করে টবে ফুলগাছ রোপণ করলে সারা বছরই কিছু না কিছু ফুল পাওয়া যাবে।
কোন ফুলগাছ টবের জন্য উপযুক্ত :
গ্রীষ্মকালে টবে ফুল চাষের জন্য রজনীগন্ধা, সূর্যমুখী, গন্ধরাজ, দোপাটি, জিনিয়া ইত্যাদি চাষ করা যায় | বর্ষায় ভালো হবে জুঁই,হাইড্রেঞ্জিয়া, বেলি, চাঁপা প্রভৃতি। শীতকালে গাঁদা, গোলাপ, ক্যামেলিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কারনেশন, স্যালভিয়া, গোলাপ, জারবেরা, এজালিয়া ইত্যাদি। সারা বছর কাঞ্চন (সাদা), জবা, কামিনী, করবী, অলকানন্দা, জয়তী, হাজারপুটিয়া, নয়নতারা, সন্ধ্যামালতী বা সন্ধ্যামণি ইত্যাদি। দীর্ঘস্থায়ী হিসেবে বেলি, জুঁই, বাগানবিলাস, গোলাপ, জবা, করবী, গন্ধরাজ, কাঞ্চন, কুন্দ, চাঁপা, মুসেন্ডা, কামিনী, স্থলপদ্ম, পোর্টল্যান্ডিয়া, ব্রানফেলসিয়া, ক্যামেলিয়া, টগর, শিউলি উল্লেখযোগ্য।
কোন ফুলগাছ সহজে মরে যায়না:
যে সব গাছ সহজে মরে না, তাদের টবে চাষ করা বেশ শ্রেয় | সহজে মরে না বা একটু কম যত্ন নিলেও ফুল ফোটে এমন গাছ রোপণ করতে চাইলে নয়নতারা, সন্ধ্যামণি, দোলনচাঁপা, কলাবতী, গাঁদা, বেলি, টাইমফুল প্রভৃতি চাষ করা যায় । লাগাতে পারেন ফুল দেওয়া বিভিন্ন ক্যাকটাস, এগুলো সহজে মরে না
রোপণ পদ্ধতি (Flower cultivation):
প্রথমে গাছের সঙ্গে উপযুক্ত সাইজের টব সংগ্রহ করতে হবে। তবে ছোট গাছের জন্য বড় টব হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু বড় গাছের জন্য ছোট টব চলবে না। প্রতি টবের জন্য দো-আঁশ মাটির সঙ্গে তিন ভাগের একভাগ পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। এরসঙ্গে একমুঠো হাড়ের গুড়ো, দুই চা-চামচ চুন, দু’মুঠো ছাই মেশাতে পারলে ভালো হয়। এতে টবের মাটি দীর্ঘদিন উর্বর থাকে।
গাছের পরিচর্যা:
মৌসুমী ফুলের ক্ষেত্রে মাসখানেক বয়সের ফুলের চারা টবে রোপণ করা উচিত। অন্য চারার ক্ষেত্রে অল্পবয়সী ভালো ও তরতাজা চারা বা কলম লাগানো ভালো। চারা লাগানোর পর আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে গোড়ার মাটি শক্ত করে দিতে হবে। লাগানোর পর গোড়ায় জল দিতে হবে। গাছকে খাড়া রাখার জন্য অবলম্বনের প্রয়োজন হয়। গাছের চারা অবস্থা থেকেই এ ব্যবস্থা করতে হয়। এ কাজে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করা যেতে পারে। সদ্য লাগানো ফুলের চারা কয়েক দিন ছায়ায় রেখে সহনশীল করে নিতে হয়। এ অবস্থায় সকালে ও বিকেলে রোদ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। টবে গাছের গোড়ার মাটি একেবারে গুড়ো না করে চাকা চাকা করে খুঁচে দেওয়া ভালো। এ ক্ষেত্রে মাটি খোঁচানোর গভীরতা হবে ৩-১০ সেন্টিমিটার বা ১ থেকে ৪ ইঞ্চি। এ কাজটি প্রতি ১০ দিনে একবার করে করতে হবে।
অধিক ফলনের উপায়:
বেশিদিন ফুল ফোটাতে চাইলে গাছে ফুল শুকোতে দেওয়া উচিত না । ফুল শুকানো শুরু হলেই ফুল কেটে দিতে হয়। এতে ভালো ফুল পাওয়া যায়। গাঁদা, অ্যাস্টার, চন্দ্রমল্লিকা প্রভৃতি গাছ থেকে বেশি ফুল বেশিদিন পেতে চাইলে প্রথম দিকে আসা কিছু কুঁড়ি ছেঁটে দিতে হয়।