কমছে সংস্কৃতি চর্চা,বাড়ছে অবক্ষয়,আলগা হচ্ছে সম্পর্কের বাঁধন,বাড়ছে জটিলতা
তপন কান্তি মাহাতো:কোথায় যেন পড়েছিলাম মানুষের সংস্কৃতি তার সভ্যতার মাপকাঠি।কোনো দেশ বা জাতি কতটা সভ্য সেটা জানান দেয় তাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গন। তাদের সাহিত্যচর্চা,নাচ গান,অভিনয় কতটা ঋদ্ধ সেটাই জানলেই সেই দেশ কতটা আলোক প্রাপ্ত।কারন দেশপ্রেম,মূল্যবোধ,সৌজন্য,অন্যের প্রতি মানবিক আচরন এসব গড়ে ওঠে সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমেই।
আমাদের ছাত্রাবস্থায় দেখেছি দূর্গাপূজা থেকেই শুরু হতো পাড়ায় পাড়ায় যাত্রা,নাটকের পালা অভিনয়।প্রতিটি পাড়ার মানুষ চেষ্টা করতো নাটক বা যাত্রা করতে। তখন তাদের হাতে পয়সা ছিল না তবুও নিজেরাই মন্ঞ্চ বেঁধে নিজেরাই অভিনয় করতো।প্রাথমিক স্কুলেও ছোটরা নানা ছোট,ছোট নাটকে অভিনয় করতো।পাড়াতে নাটক করার জন্য পাড়ার সবাই উৎসাহ দিত ঠিক তেমনেই স্কুলে অভিনয় করতে শিক্ষক,বাবা মারা উৎসাহ যোগাতেন।স্কুলের পত্রিকা,পাড়ার দেওয়াল পত্রিকাতে ছোটদের লেখা বেরোত।নাটক,যাত্রার বিষয় হতো দেশপ্রেম,ঐতিহাসিক,পৌরানিক ,সামাজিক।কালজয়ী উপন্যাসের নাট্যরূপ যেমন দেখা যেত তেমনই দেশপ্রেমী নায়ক,ইতিহাসের বীর যোদ্ধাদের জীবনী দেখা যেত এইসব পালার মধ্য দিয়ে।ছোট,বড় সবাই বিভিন্ন বিখ্যাত লেখক,ও চরিত্রের সাথে পরিচিত হতো এভাবেই।নিজেদের সম্পর্কের বাঁধন দৃঢ় হতো এসবের মধ্য দিয়েই।তাই তখন সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সভা,মিছিল করতে হতো না। তখন আকাশবানী কলকাতার বুধবারের সন্ধ্যার যাত্রা,শুক্রবারের সন্ধ্যার নাটক শোনার জন্য পাড়ার অনেকেই যার বাড়িতে রেডিও ছিল তাদের বাড়িতে এসে একসাথে এসব শুনতো।এমনকি ছোটরাও বাদ যেত না।এভাবেই বিকাশ হয়েছিল সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের।
আজ ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াতে সব কিছু বিনোদন সহজলভ্য হওয়ায় এসব বিলোপ হতে চলেছে।মানুষ এসবের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে।মানুষ ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়েছে তার পাড়া থেকে,তার একান্নবর্তী সংসার থেকে।নিজেরাই নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছে।সম্পর্কের বাঁধন হয়েছে আলগা।সবাই ক্রমশ একাকীত্বের দিকে এগিয়ে চলেছি।নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে একই পরিবারের সবার মধ্যে দূরত্ব তৈরী হওয়ায় সম্পর্কের জটিলতা বাড়ছে।একাকীত্ব কাটাতে অনেকেই নানা নেশাতে ক্রমশ আসক্ত হয়ে পড়ছে।
আগামী প্রজন্ম নিজের সংস্কৃতি,সাহিত্য থেকে আজ দূরে।তাই তাদের মনে দেশপ্রেম,মূল্যবোধ,মানবিক গুনের বিকাশ দেখা যাচ্ছে না।
এসবের জন্য দায়ী আমরা এই অভিভাবকেরাই।নিজেরাই নিজেদের ক্রমশক্ষুদ্র পরিমন্ডলে আবদ্ধ করে ফেলেছি। প্রতিযোগিতার যাঁতাকলে সন্তানদের ফেলে সবসেরা বানাতে চাইছি।তাই তারা হারিয়েছে শৈশবের আনন্দ,খেলার মাঠ,যাত্রা নাটকের আসর।টিউশন,নাচ,গান,সাঁতার শেখানোর চেষ্টা বাবা মার হাত ধরে তারা শুধু ছুটে চলেছে।
তারা জানেনা পাড়ার পুকুরে একসাথে স্নান করা,বিকেলে সবাই একসাথে খেলতে।সব ক্রমশ একা আর একা।