মহালয়ার প্রভাতে পিতৃপক্ষের অবসানে মাতৃপক্ষের প্রারম্ভে শারদীয়ার আগমন ঘোষিত হয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কন্ঠে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ আলেখ্য পাঠের মধ্য দিয়ে। “পুজো এসেছে” এই বার্তা যেন আকাশ-বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে সেই কন্ঠস্বরেই। কিন্তু একদা সেই কন্ঠকেই রদ করা হয়েছিল মহালয়ার সকালে। পরিবর্ত কন্ঠ হয়েছিলেন অভিনেতা উত্তমকুমার। ফলফলে নিজের প্রিয় ম্যাটিনি আইডল উত্তমকুমারকেই তীব্র ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল বাঙালি।
১৯৩৭ সাল। সেই প্রথম বার মহালয়ার প্রভাতে সম্পূর্ণ বেতারলিপি প্রচারিত হল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নামে। লেখনী- বাণীকুমার, সঙ্গীত- পঙ্কজ মল্লিক, আলেখ্যপাঠ- বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। তারপর থেকেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠস্বর বেজে ওঠে আকাশবাণীর বেতারকেন্দ্র থেকে। ব্যতিক্রম ১৯৭৬ সাল। ততদিনে বৃদ্ধ হয়েছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ মূল অনুষ্ঠানটিও ১৯৬৬ সালে রেকর্ড করা হয়েছে। মহালয়ার ভোরে তাই বাজানো হত৷ হঠাৎই ১৯৭৬ সালে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি নতুনভাবে রেকর্ড করার। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের পরিবর্তে উত্তমকুমার।
তখন অভিনেতা হিসাবে উত্তম খ্যাতির মধ্যগগনে৷ বাঙালির ম্যাটিনি আইডল। মহালয়ায় ‘দুর্গা দুর্গতিহারিণী’ নামে নতুন অনুষ্ঠানে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের পরিবর্তে মহানায়ক উত্তমকুমারের কণ্ঠ ব্যবহার করা হয়। উত্তমকুমারের কারণে এই অনুষ্ঠান আরও জনপ্রিয়তা ও ভিন্নমাত্রা পাবে বলে আশা করেছিল রেডিও কর্তৃপক্ষ। ঐ বছর মহালয়ার ভোরে আকাশবাণী থেকে পরিবেশিত হয় সেই অনুষ্ঠান। ব্যাস! সব হিসাব উল্টে যায়। বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আপামর বাঙালি। শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। কলকাতার মানুষজন ক্ষোভে রাস্তায় নেমে আসেন। বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু হয় জায়গায় জায়গায়। ভাঙচুর করা হয় আকাশবাণীর কার্যালয়। পিছু হটেন আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ৷ ষষ্ঠীর দিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পাঠ করা ‘মহিষাসুরমর্দিন’ সম্প্রচার করতে বাধ্য হয় রেডিও কর্তৃপক্ষ। অভিনেতা হিসাবে খ্যাতির শিখরে থেকেও বাঙালির আবেগের কাছে প্রত্যাখ্যাত হন উত্তমকুমার।