নিজেদের দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামলেন জঙ্গলমহলের খাড়িয়া (শবর) জনগোষ্ঠী। বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লক এলাকায় মিছিল করলেন জনজাতির কয়েকশো মানুষ। সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে জমা দিলেন সাত দফা দাবি সহ আবেদনপত্র।
জঙ্গলমহলের অন্যতম প্রাচীন জনজাতি খাড়িয়া তথা শবরেরা। রানিবাঁধ ব্লক এলাকায় এদের ৫৬৯টি পরিবারের প্রায় ২ হাজার মানুষের বসবাস। জঙ্গলের গভীরে বিভিন্ন পাহাড়-ডুংরি সংলগ্ন এলাকার এই জনজাতির মানুষেরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত। শিক্ষার অভাব, দারিদ্র, মাদকাসক্তি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবায় অসচেতনতা তাঁদের ক্রমশ প্রান্তিক করে তুলছে। তাই এইদিন জনজাতিদের সংগঠন খাড়িয়া (শবর) সংগ্রাম সমিতির পক্ষে কয়েকশো মানুষ রানিবাধে মিছিল করেন জমা দেন দাবি পত্রও।
সাত দফা দাবিতে তাঁরা জানিয়েছেন –
১. বাস্তুহীন শবরেরা বসবাস করে বনের জমিতে কিম্বা সরকারী জমিতে। এই পরিবারগুলিকে সরকারীভাবে বাস্তু জমির পাট্টা প্রদান করতে হবে অথবা বসবাসের জমিতে বাস্তু রেকর্ড করতে হবে।
২. রানিবাঁধ ব্লক এলাকার মোট ৫৬৯টি পরিবারের মধ্যে বঞ্চিত ৩৭১ টি পরিবারকে পি.এম.এ.ওয়াই প্রকল্পে বাসগৃহ দিতে হবে।
৩. সরকারের ঘোষনা মতো শবরদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ করে দেওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে ফর্ম জমা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করা হয়নি। ঐ পরিবার গুলিতে অবিলম্বে বিদ্যুৎ সংযোগ করে দিতে হবে।
৪. সমস্ত শবর গ্রামগুলিতে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. পুড্ডি অঞ্চলের ঘোলকুঁড়ি , রূদড়া অঞ্চলের জভি, কুল্যাম, রানিবাঁধ অঞ্চলের মৌলা , এবং রাওতড়া অঞ্চলের রায়গড় এলাকায় সরকারি উদ্যোগে যাতায়াতের রাস্তা তৈরি করতে হবে।
৬. প্রমাণের অভাবে আধার কার্ড না থাকায় শবরেরা সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্লক থেকে ক্যাম্প করে তাঁদের আধার কার্ড-এর ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
৭. বেঠুয়ালা প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে খাড়িয়া (শবর) ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি ছাত্রাবাস ছিল। সেখানে শবর ছাত্রছাত্রীদের থাকা, খাওয়া ও পড়াশুনা করার জন্য ব্যবস্থা ছিল। সেই ছাত্রাবাসটি দীর্ঘদিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রানিবাঁধে যে শবর বালিকা হোস্টেলটি রয়েছে, সেখানে শবর ছাত্রীদের রাখার জন্য উৎসাহ না দিয়ে অন্যান্য আদিবাসীদের ছাত্রীদের রাখা হয়। তা বন্ধ করে শবর ছাত্রীদেরই সেখানে আবাসিক হিসেবে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
তাঁদের দাবিগুলো বিবেচিত না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।