অতীতকাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন দেব দেবীর পুজো করে আসছে। তাই নানা জায়গায় বহু পুরানো মন্দির রয়েছে। এবং এর অতীত কাহিনীও বেশ আকর্ষণীয়। তেমনই একটি পুরানো মন্দির হলো ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের পাথরকাটি গ্রামের জয় চন্ডী মন্দির।মন্দিরটি প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি পুরানো। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন রাম লোধা। এক সময় এখানে পাশের তালাই গ্রামের লোধা শবর সম্প্রদায়ের মানুষরা জঙ্গেল শিকার করে বা ফলমূল সংগ্রহ করে খেত। একদিন রাম লোধা জঙ্গলে শিকারে গিয়ে কোনো শিকার না পেয়ে গাছের তলায় বিশ্রাম নিতে নিতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তারপর মা জয়চন্ডীর স্বপ্নাদেশে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে শবর সম্প্রদায়ের লোকেরাই এই মন্দিরে সারা বছর পুজো করে থাকেন। শুধু মাত্র দুর্গা পুজোর চারটি দিন ব্রাহ্মণরা পুজো করে। বছরের ৩৬৫ দিনই মন্দিরে পুজো হয়। বেশির ভাগ শনিবার ও মঙ্গলবারে বলি পুজোও হয়ে থাকে।মন্দিরের পূজারী ছোটু প্রামানিক জানান, কয়েক প্রজন্ম ধরে তাদের পরিবার এই মন্দিরের পুজো করে আসছে। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রাম লোধাও ছিলেন তাদের পরিবারেরই একজন। এইবছরের পুজো সম্পর্কে তিনি বলেন, “এই বছর আর ব্রাহ্মন নয় আমরাই পুজো করবো, প্রতি বছর পুজোর সময় ব্রাহ্মনদের সমস্ত দক্ষিনা ও বেতন দিতে হয়। তাই এই বছর থেকে আমরাই পুজো করবো” তিনি আরো জানায় আগে মন্দির চত্বরে অনেক বড়ো বড়ো গাছ ছিল কিন্তু এখন পুরোনো গাছ বলতে শুধু একটি কদম গাছ রয়েছে। মন্দিরের পুজোর নিয়ম সম্পর্কেও তিনি বলেন আগে গণেশ পুজো করতে হয় জবা ফুল দিয়ে, তারপর কলকা ফুল দিয়ে শিবের পুজো এবং অকালবোধনে ১০১ টি পদ্ম ফুল দিয়ে মা দুর্গার পুজো করা হয়।
জেলার বাইরে থেকেও অনেক ভক্ত ভিড় জমায় এই পাথরকাটি গ্রামের জয় চন্ডি মন্দিরে। নবমীর দিন ভক্তদের প্রায় ১ কিমি থেকেও বেশি লম্বা লাইন লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরটি বেশ জাগ্রত। অনেকেই মানসিক করে এবং মনোবাসনা পূরণ হলে দেবীর নিকট আবার পুজো দেয়। পাশাপাশি একালায় দুর্গা পূজায় মণ্ডপ পুজো হয় না শুধু মাত্র জয় চন্ডী মন্দিরেই হাজার হাজার মানুষের সমাগম দেখা যায়।