আজ যখন রাম মন্দিরকে নিয়ে দেশ জুড়ে এক আবেগ সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক অন্য দিকে চলছে রাম নিয়ে রাজনীতি। তবে আপামর দেশবাসীর কাছে রাম শুধুমাত্র দেবতাই নন, রাম নাম বেঁচে থাকার রসদ, রাম ছোটবেলার সুপার হিরো। তাই শুধুমাত্র বর্তমানেই নয়, রামকে নিয়ে অতীতেও এই আবেগ হিন্দুস্তান বাসীর কাছে ছিল। বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখায় বারে বরে ভগবান শ্রী রাম কে তার লেখায় মাধ্যমে তুলে ধরে বুঝিয়ে দিয়েছেন তার রাম প্রিতি। নিচে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় ভগবান শ্রী রামচন্দ্রের নাম তুলে ধরা হলো।
উদ্ধার করেন। তিনি গুহকচন্ডালকে মিত্র বলিয়া আলিঙ্গন করেন। বনের পশু বানরদিগকে তিনি প্রেমের দ্বারা ধন্য করেন। ভক্ত হনুমের জীবনকে ভক্তিতে আর্দ্র করিয়া তাহার জন্ম সার্থক করিয়াছেন। বিভীষণ তাঁহার পরম ভক্ত। রাবণও শত্রুভাবে তাহার কাছ হইতে বিনাশ পাইয়া উদ্ধার হইয়া গেল। এই রামায়ণে ভক্তিরই লীলা।
ভগবান যে শাস্ত্রজ্ঞানহীন অনাচারীরও বন্ধু, কাঠবিড়ালির অতি সামান্য সেবাও যে তাঁহার কাছে অগ্রাহ্য হয় না, পাপিষ্ঠ রাক্ষসকেও যে যথোচিত শাস্তিএ দ্বারা পরাভূত করিয়া উদ্ধার করেন, এই ভাবটিই প্রবল হইয়া ভারতবর্ষে রামায়ণ কথার ধারাকে গঙ্গার শাখার ন্যায় পথে পথে লইয়া গেছে।”- (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, “সাহিত্য সৃষ্টি”)
“আমরা বিদেশি, আমরা নিশ্চয় বলিতে পারি না গ্রিস তাহার সমস্ত প্রকৃতিকে তাহার দুই কাব্য প্রকাশ করিতে পারিয়াছে কিনা, কিন্তু ইহা নিশ্চয় যে ভারতবর্ষ রামায়ণ মহাভারতে আপনাকে আর কিছুই বাকি রাখে নাই। পাশ্চাত্য পন্ডিত এবং সমালোচক কেউ কেউ এ কথাটি স্বীকার করেছেন। ” ………
” রামায়ণ …বৃহৎ বনস্পতির মতো দেশের ভূতলজঠর হইতে উদ্ভূত হইয়া সেই দেশকে আশ্রয় দান করিয়াছে ; তাকে সাধারণ কাব্য সমালোচনার আদর্শে বিচার করা অবিধেয় এবং অযৌক্তিক । এ মহাকাব্য স্বয়ং মহাকাল, যিনি সরল অনুষ্টুপ ছন্দে ভারতবর্ষের সহস্র বৎসরের হৃদপিন্ড স্পন্দিত করিয়া আসিয়াছেন।”
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“ভগবন ত্রিভুবন, তোমাদের প্রত্যক্ষ বিরাজে
কহ মোরে কার নাম অমর বীণার ছন্দে বাজে।
কহ মোরে বীর্য কার ক্ষমার করে না অতিক্রম
কাহার চরিত্র ঘেরি সুকঠিন ধর্মের নিয়ম
ধরেছে সুন্দর কান্তি মানিক্যের অঙ্গদের মতো,
মহৈশ্বর্যে আছে নম্র, মহাদৈন্যে কে হয়নি নত,
সম্পদকে থাকে ভয়ে, বিপদে কে একান্ত নির্ভীক,
কে পেয়েছে সবচেয়ে, কে দিয়েছে তাহার অধিক,
কে লয়েছে নিজ শিরে রাজভালে মুকুটের সম
সবিনয়ে সগৌরবে ধরাধামে দুঃখ মহত্তম,
কহ মোরে সর্বদর্শী হে দেবর্ষি তাঁর পুণ্য নাম।
নারদ কহিলা ধীরে, অযোধ্যার রঘুপতি রাম।”
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তথ্যসুত্র : চয়ন মুখার্জীর ওয়াল থেকে নেওয়া।