সহজ পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদে চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ

সহজ পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদে চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ – শীতকালীন মৌসুমী ফুলের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকাও বেশ জনপ্রিয়। ক্রিসমাসের সময় ফোটে বলে একে ক্রিসেন্থিমামও বলা হয়। জাপানচীন এর আদি জন্মস্থান। এটি বিভিন্ন বর্ণ ও রঙের হয়ে থাকে। তাই একে ‘শরৎ রানি’ও বলা হয়। বাড়ির আঙিনা, বারান্দা ও ছাদে ফুলটি চাষ করা যায়।

উপযুক্ত জাতগুলি:-

আলগা ফুলের জন্য:

বাসন্তি, বাসন্তিকা, বিধান লালিমা, বিধান চন্দ্রমল্লিকা-৭, বিধান চন্দ্রমল্লিকা-১৭, বিধান মাধুরী, বিধান তরুণ, তমারা, গৌরী, আরকা গোল্ড ইত্যাদি।

ছেদন বড় ফুলের জন্য :
বিগ ভায়োলেট, হোয়াইট জেম, ইয়েলো জেম, পুসা সেন্টিনারি, কুনচিৎ, পুসা অরুণিমা, পুসা তাইচেন কুইন ইত্যাদি।

ছোট ছেদন ফুলের জন্য :
অগ্নিশিখা, অজয়, আনমোল, বিধান মল্লিকা, বাসন্তি, বাসন্তিকা, গৌরী, নানাকো, ইয়েলো বয়, মাগি, পূজা, শোভা, বিষ্ণুপ্রিয়া, বিধান মাম, বিধান প্রদ্যোৎ, বিধান মাধুরী ইত্যাদি।

টবে ও বাগান সাজানোর জন্য :
বিধান জয়ন্তি, বিধান রজত, বিধান তরুণ, বিধান সবিতা, বিধান গোল্ড, হিমাংশু, মাদার টেরেজা, পিঙ্ক স্টার, রেড বল, সৎভাবনা, হোয়াইট অনিমন ইত্যাদি।

টবে ফুল দেয় সারাবছর এমন জাত :
অজয়, আনমোল, বিধান প্রদ্যোৎ, পুশা আদিত্য, বিধান পূর্ণা, বিধান মাধুরী, বিধান মল্লিকা এ-১৮/২২, বিধান-১৩ ইত্যাদি।

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ এর উপযুক্ত জলবায়ু:

চন্দ্রমল্লিকা গাছের বৃদ্ধির জন্য দিন ও রাত্রের তাপমাত্রা যথাক্রমে ২২ ও ১৬ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড প্রয়োজন, তবে এই ফুল গাছ ১৫-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত ভালো থাকে।
বর্ষাকাল থেকে শীতের শেষ পর্যন্ত পলিহাউসের মধ্যে চাষ করা যেতে পারে। যেহেতু শীতকালে হ্যালোজেন লাইট রাত্রি বেলাতে লাগালে গাছের ফলন বৃদ্ধি পায়, ফুল দেরিতে উৎপন্ন হয়।

এইসব ফুলের বাজার দর অনেকটা পারিপার্শ্বিক অনুষ্ঠানের উপর নির্ভর করে, সেই জন্য অতিরিক্ত আলো দিয়ে দেরীতে ফুল ফোটানো হয় আবার আলোকে সরিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি ফুল ফোটানো হয়।
অনেক সময় সাময়িক ছায়া তৈরী করে তাড়াতাড়ি ফুল ফোটানো হয়, আবার ফসফেট ও পটাশ সার একটু বেশি মাত্রায় প্রয়োগ করেও তাড়াতাড়ি ফুল ফোটানো হয়।
যাই হোক না কেন পূর্ণ সূর্যের আলোতে এবং কম আর্দ্রতাযুক্ত ও ঠাণ্ডা জায়গাতে চন্দ্রমল্লিকার ফলন ভালো হয়।

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ এর জন্য উপযুক্ত জমি ও মাটি:

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ এর জন্য উঁচু জমি প্রয়োজন যেখানে বৃষ্টিতে জল জমা হবে না, দিনভর সূর্যের আলো থাকবে ও সমতল ভূমি হবে।
বেলে-দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি এই ফসল চাষের পক্ষে উপযুক্ত।
কাদা ও একদম বেলে মাটিতে এর চাষ করা যাবে না।

চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ এর জন্য চারা তৈরি:

চন্দ্রমল্লিকা ফুলের চারা তৈরি করার পদ্ধতি খুব সহজ এবং সারাবছর এর চারা তৈরী করা যেতে পারে কাটিং করে। একজন চাষীভাই একদিনে ৫০০-৬০০ কাটিং করতে পারে।
এমনভাবে গাছের শাখা কাটা হয় যাতে ৪-৫টি গাঁট থাকে। কাটা অংশের উপরে গাঁটের থেকে পাতাকে ছেটে কাটা অংশে শিকড় বেরতে সাহায্যকারী রুটিং হরমোন যেমন, সিরাডেক্স / অ্যারাডেকস, রুটেক্স/কাটিং এড প্রভৃতি কাটা অংশে লাগাতে হবে।
এরপর একটি বালির বেড বানাতে হবে। ওই বেডকে ব্লাইটক্স ২ গ্রা/ লিটার জলে গুলে ধুইয়ে দিতে হবে। তার পর চন্দ্রমল্লিকার কাটিং ওই বালির বেডের মধ্যে ধান রোয়ার মত রোপণ করে যেতে পারে।

এইভাবে ১৫ দিনের মধ্যে চারার শেকড় জন্মাবে এবং ২২-২৮ দিনে চারা তৈরি হয়ে যাবে।
এইভাবে অনেকে চারা তৈরি করে দেশের প্রান্তে পাঠাচ্ছে, তবে চারা যে গাছ থেকে নেওয়া হবে সেই গাছটি যেন রোগমুক্ত ও স্বাস্থ্যবান হয়।
জমি তৈরী ও চারা রোপণ :

সাধারণত যে জমিতে চন্দ্রমল্লিকা লাগানো হয় তা আলগা ও ছেদনফুল চাষের জন্য।
এখানে মাটিকে ২-৩ বার ভালো করে লাঙ্গল দেওয়ার পর ঘাসমুক্ত করতে হবে।

শেষ বার চাষ দেওয়ার সময় একরে ৬ টন গোবর সার + ৫০ কেজি ইউরিয়া + ২০০ কেজি সিঙ্গেল সুপার ফসফেট + ৫০ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ + ২৫ কেজি নিমখোল + ২৫ কেজি সরষের খোল মিশিয়ে দেওয়ার পর বেড বানাতে হবে।
বেডের আকার হবে ৩ ফুট চওড়া ও ৬ ইঞ্চি উচু এবং জমির আকার অনুযায়ী লম্বা।

চাপান সার:

চাপানসার দুইবার দেওয়া হয়, প্রথমবার ২০ দিনের মাথায় ঘাস নিড়ানি দেওয়ার পর।
এক্ষেত্রে ১০-২৬-২৬ সার ২৫ কেজি ও সরষের খোল ২৫ কেজি দিয়ে গোড়ায় মাটি ধরাতে হবে।
দ্বিতীয়বার ৪০-৪৫ দিনের মাথায় আবার নিড়ানি দেওয়ার পর সমপরিমাণ সার দিয়ে আবার মাটি ধরাতে হবে।
টবের গাছের ক্ষেত্রে শেষবার টবে গাছ লাগানোর পর প্রতি ১৫ দিন অন্তর সরষের খোল ও ১০-২৬-২৬ পচানো সার গোড়ায় ঢালতে হবে।

তবে অবশ্যই একটি বিশেষ ঞ র পরামর্শ নিন।

ডাল ছাঁটা ও অন্যান্য পরিচর্যা:

আলগা ফুলের জন্য ৪-৫ বার শাখা প্রশাখার ডগা ছাঁটতে হবে প্রতি ১৫ দিন অন্তর।
আবার ছেদন ফুলের জন্য ২-৩ বার ডাল ছাটতে হবে ১৫ দিন অন্তর।
উভয় ক্ষেত্রে বেডেতে বাঁশের খুঁটি ও নাইলন দড়ি দিয়ে গাছকে সোজা রাখতে হবে, যাতে গাছ কোনভাবে না হেলে পড়ে।
চন্দ্রমল্লিকায় জমিতে ঘাস মারার ওষুধ ব্যবহার না করাই ভাল, এতে গাছের বৃদ্ধির ক্ষতি হয়।
নিড়ানির মাধ্যমে আগাছা দমনে ফলন ভালো পাওয়া যায়।

কুঁড়ি
চন্দ্রমল্লিকার বেড ও টব আগাছামুক্ত রাখা উচিত।
চারা লাগানোর মাসখানেক পর গাছের আগা কেটে দিতে হয়। এতে গাছ লম্বা না হয়ে ঝোপালো হয়।
চারা গাছে তাড়াতাড়ি ফুল আসলে তা সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করতে হয়।
বড় আকারের ফুল পেতে হলে ডিসবাডিং করা উচিত। অর্থাৎ মাঝের কুঁড়িটি রেখে পাশের দুটি কুঁড়ি কেটে ফেলতে হয়।
আর মধ্যম আকারের ফুল পেতে চাইলে মাঝের কুঁড়িটি অপসারণ করা উচিত।

সেচ:
চন্দ্রমল্লিকার চারা বিকেলে লাগিয়ে গোড়ার মাটি চেপে দিতে হয়।
চারা লাগানোর পর হালকা সেচ দিতে হয়।
গাছ কখনো বেশি জল সহ্য করতে পারে না। তাই জল এমনভাবে দিতে হবে যেন গোড়ায় বেশিক্ষণ জল জমে না থাকে।
চারা রোপণের আগে এবং পরে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পরিমাণমতো সেচ জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হোম
জয়েন গ্রুপ
স্থানীয় খবর
জয়েন গ্রুপ
গুগল নিউজ