ছোটনাগপুর মালভূমি এলাকার জনজাতিদের কৃষি উৎসব হল করম পরব। প্রধানতঃ কুড়মী, কামার, কুমোর, মুন্ডা, ভূমিজ, হিতামিতান জনগোষ্ঠীর উৎসব এটি। কুমারী মেয়েরা পালন করে এই করম পরব।
করম পরবে সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে আছে জাওয়া গীত। করম পরবের একসপ্তাহ আগে থেকেই জাওয়া তোলা হয়ে গেলে কুড়মী এবং অন্যান্য জনজাতিদের গ্রামগুলি থেকে সন্ধ্যাবেলা ভেসে আসে জাওয়া গানের সুর। আর চাষ ভালো না হওয়া, দারিদ্র্য, মাতাল স্বামী, সংসারে অশান্তি, কাজের জন্য সন্তান স্বামীর বিদেশ যাত্রা এই সব দুঃখ, কষ্ট, চাওয়া পাওয়া হয়ে ওঠে গানের বিষয়।
কুড়মি ও অন্যান্য জনজাতির করম ও জাওয়া উৎসব সম্পূর্ণভাবে মহিলাদের। কুড়মালি ভাষায় ‘জাওয়া’ কথার অর্থ হল অঙ্কুরিত করা। পাঁচ বা সাত রকমের বীজকে অঙ্কুরোদগম করার জন্য জাওয়া দেওয়া হয়। কুমারী মহিলারা ‘জাওয়া’ দেন করম একাদশীর নয়, সাত কিংবা পাঁচদিন আগে থেকে। যাঁর ‘জাওয়া ডালি’ যত সুন্দর হয়, চারাগুলি যত সবল হয়, বলা হয় সেই মেয়ে তত পরিশ্রমী, সংযমী, ধৈর্যশীলা। তাই বাঁশের ডালি বা টুপাতে বালির মধ্যে পঞ্চবীজ ফেলে ‘জাওয়া উঠানো’র দিন থেকে তার যত্ন নেওয়া হয়। এ যেন মেয়ের ‘মা’ হয়ে উঠে সন্তান প্রতিপালনের বোধ তৈরি। করম পরবের দিন সন্ধ্যাবেলা পাড়ার ‘লায়াঘরে’ করম বৃক্ষের পুজো করেন লায়াঠাকুর।