সময়টা ছিল ১৯৭২ সাল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পারমাণবিক পরীক্ষা নিরীক্ষা তখন প্রধান চর্চিত বিষয়। ১৯৭৪ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর তত্ত্বাবধানে পোখরানে সম্পন্ন হলো অপারেশন smiling buddha। সেই সময় পাকিস্তান ও ভারতের দেখাদেখি পারমাণবিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো আব্দুল কাদির খান কে আমন্ত্রণ জানান পারমাণবিক পরীক্ষা করার জন্য। এই আব্দুল কাদির খান নেদারল্যান্ডের ইউরেনিয়াম সংস্থা ইউরেনকোতে কাজ করতেন। সেখান থেকে তথ্যপ্রমাণ চুরি করার অভিযোগ ওঠে। ১৯৭৬ সালে রাওয়ালপিন্ডির কাহটা শহরে শুরু হয় কাজকর্ম।
সেই সময় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ভারত সরকার জানতে জানতে উদ্যোগী হয়, সত্যিই পাকিস্তান পরমাণু বোমা তৈরি করছে কিনা। প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরে ISI এর প্রভাব নিয়েও চিন্তিত ছিলেন। ইতিমধ্যে সিকিম মিজোরামের সমস্যা সমাধান করে প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে আসেন অজিত দোভাল। শ্রীমতী গান্ধী IB এর বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেন, কিছু ভারতীয় এজেন্ট তথ্য সংগ্রহের জন্য পাকিস্তানে যাবে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এই ব্যাপারে ভারতকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ভারত থেকে যে দলটিকে পাকিস্তানে পাঠানো হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন অজিত দোভাল। পুরো দলটিকে পাকিস্তানি আদব কায়দা, ভাষা, সংস্কৃতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১৯৭৬ এ পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তাঁরা। সমগ্র পাকিস্তান জুড়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর রাওয়ালপিন্ডির কাহোটাতে পাকিস্তানের গোপন গবেষণাগারটি খুঁজে পায়। অজিত দোভালের দল গবেষকদের ওপর কড়া নজর রাখলেও নিশ্চিত হতে পারছিলেন না ঠিক কি ধরনের গবেষণা চলছে। এতদিনে একটা বছর অতিক্রান্ত হয়। ১৯৭৭ সালে ভারতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। ক্ষমতায় আসেন বিজেপি সরকার প্রধানমন্ত্রী হন মোরারজি দেশাই । শ্রীমতী গান্ধী RAW কে নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করতেন শুধুমাত্র নিজের এই ব্যাক্তিগত ধারণার ওপর ভিত্তি করে ক্ষমতায় এসেই তিনি RAW এর বার্ষিক বাজেট ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেন। এদিকে পাকিস্তানে বেশ কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করে অজিত দোভাল এর দল গবেষকদের চুল সংগ্রহ করে নমুনা পরীক্ষা করার জন্য ভারতে পাঠান। সেই চুলের নমুনা পরীক্ষা করে সেখানে তেজস্ক্রিয়তা পাওয়া যায়। সেই সময় নিজের বিচক্ষণতা ও কূটনৈতিক বুদ্ধির মাধ্যমে অজিত দোভাল কাহটার এক গবেষককে দশ হাজার ডলারের বিনিময়ে পাকিস্তানের পরমাণু পরীক্ষার তথ্য ভারত কে দিতে রাজি করিয়ে নেন। এই ঘটনা ভারতের RAW এর প্রধান কে জানানো হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইকে জানানো হয়। তিনি এ বিষয় এ কোনো প্রকার সাহায্য করতে অস্বীকার করেন।অজিত দোভালের দল কাহটা গবেষণাগারে air strike করার পরিকল্পনা করেন। তাতে ভারত সরকারের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি মেলেনি।
ইতিমধ্যে ১৯৭৮ সালে পাকিস্থানে ক্ষমতার পালাবদল হয়। জিয়াউল হক ক্ষমতায় আসেন। কূটনৈতিক স্তরে জিয়াউল হকের সাথে মোরারজি দেশাইয়ের প্রায়ই মত বিনিময় হত। মোরারজি দেশাই জিয়া উল হককে বলেন, তিনি পাকিস্থানের গোপন গবেষণার তথ্য জানেন। জিয়া উল হোক ধরে ফেলেন পুরো বিষয়টি। ISI এ ব্যাপারে দ্বিগুণ সক্রিয় হয়ে ওঠে। বেশ কিছু ভারত এজেন্ট ধরা পড়েন। অজিত দোভাল তখনও সেখানে ছিলেন। তিনি কোনক্রমে নজর এড়িয়ে লাহোরে চলে যান ও সেখান থেকে পাকিস্তান সরকারের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গোপন তথ্য ভারতে পাঠান। পুরো সাত বছর তিনি প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নিজের দেশের স্বার্থে পাকিস্থানে ছিলেন। বর্তমানে এই ৭৯ বছর বয়সী ভারতীয় জেমস বন্ড ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত। এখনও তিনি অবিরত দেশের সেবায় নিয়োজিত।