Virat Kohli : বিরাট কোহলি – এক রূপকথার জন্ম

Virat Kohli : বিরাট কোহলি - এক রূপকথার জন্ম

দৃশ্য – ১ : – ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৬। দিল্লির বাইশ গজে একের পর এক চোখ ধাঁধানো কভার ড্রাইভে বোলারকে দিশেহারা করে দিচ্ছিলেন বছর ১৮ – র এক তরুণ। ছেলেটার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন কোচিং স্টাফরা। ছেলেটার বয়স মাত্র ১৮। অথচ এই বয়সেই ব্যাটকে যেন কথা বলাতে পারে সে। ক্লান্তি শব্দটা যেন তার অভিধানে নেই। ক্রিকেটের প্রতি ওর প্যাশন মুগ্ধ করে দলের বাকিদের। ওর এক একটা কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ, হুক কিংবা পুল যখন সবুজ গালিচার মতো মাঠ চিরে ছুটে চলে বাউন্ডারির দিকে তখন যেন চোখে আরাম লাগে। … বোলার আবার রান আপ শুরু করেছে। আগের পাঁচটা বলের প্রতিটা ওই বছর ১৮ – র ছেলেটা বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছে। ছেলেটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে বোলারের দিকে। ওভারের শেষ বলটা মাটিতে পড়েই কিছুটা লাফিয়ে উঠল, সোজা আঘাত করল ব্যাটারের বুকে। ব্যাট ছেড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল ছেলেটা।

দৃশ্য -২:- দিল্লির একটি অবস্থাপন্ন পরিবার। গৃহকর্তা সকাল সকাল স্নান সেরে খেতে বসেছেন। গত দিন দুয়েক হল শরীরটা ভালো যাচ্ছে না তার। বুকটা কেমন যেন ভারী ভারী ঠেকছে। আজ তার কোর্টে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু কোর্টে তাকে আজ যেতেই হবে। একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে। খাওয়া শেষ করে বেসিনের সামনে গেলেন সেই ভদ্রলোক। হঠাৎ করেই মাথাটা কেমন ঘুরে গেল তার। বেসিনের সামনে মুখ থুবড়ে পড়লেন তিনি। তারপর বাড়ির অন্যান্যদের ছোটাছুটি। ভদ্রলোককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার ঘোষণা করলেন মারা গেছেন তিনি।

দিল্লির মাঠে সেদিন যে অখ্যাত ছেলেটি প্র্যাকটিসে মগ্ন ছিল তার নাম বিরাট কোহলি। এখন যার ১৮ নম্বর জার্সির প্রেমে পাগল আট থেকে আশি। আর যে ভদ্রলোক সেদিন মারা গিয়েছিলেন তার নাম প্রেম কোহলি। তার পরিচয় তিনি বিরাটের বাবা। সাধারণত বাবার নামেই ছেলের পরিচয় হয় কিন্তু হাতেগোনা যে কয়েকজন ছেলের কারণে পরিচিত হন তাদের ভাগ্য খুব সুপ্রসন্ন। বাবার মৃত্যু সেদিন নিশ্চয় বিরাট আঘাত হয়ে নেমে এসেছিল পরবর্তীকালের বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যাটারের জীবনে। তবে একথাও সত্যি সেদিন বিরাটের জন্য যে অগ্নিপরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছিল তা পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে উপহার দিয়েছিল খাঁটি একটুকরো সোনা। কারণ বাবার দেহ দাহ করা স্থগিত রেখেই সেদিন বিরাট রঞ্জি খেলেছিলেন দিল্লির হয়ে। শুধু খেলেননি, বিরাটের ব্যাট সেদিন পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল দিল্লিকে। চোখের জল লুকিয়ে দিল্লিকে পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচানোর পর বাবার দেহ দাহ করেছিলেন তিনি।

তবে শুধু প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণা নয়, বিরাটকে ছেড়ে তার বাবা যেমন হঠাৎ করেই পাড়ি জমান নেই রাজ্যের দেশে তেমনি বিরাটের জীবনে বসন্তদিনের আনাগোনাও কিন্তু হঠাৎ করেই। সালটা ২০১৩। বিরাট ততদিনে সাফল্যের শীর্ষে। গোটা পৃথিবী জুড়ে অগণিত তরুণীর রাতের ঘুম কেড়েছেন তিনি। ২২ – গজে তার ব্যাটের সিম্ফনি শুনতে দেশ থেকে দেশের বাইরে প্রতিটা মানুষ অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষার প্রহর গোনেন। এমনই এক সময়ে দিল্লির মাঠের সেই উদ্ধত তরুণ ধরা দিলেন মুম্বইয়ের এক তরুণীর চোখের মোহমায়ায়। ততদিনে অবশ্য সেই তরুণীর চোখের জাদুতে কাবু হয়েছেন হাজার হাজার যুবক।

একটা শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনে অনুষ্কা শর্মাকে প্রথম দেখেন বিরাট। ব্যাস, লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। অনুষ্কার (Anushka Sharma) থেকে প্রত্যুত্তর এসেছিল অবশ্য অনেক পরে। তারপর… আঙুলে আঙুল, ঠোঁটে ঠোঁট। প্রেমের ইস্তেহার পাচার হয়ে গিয়েছিল দুজনের মধ্যে। ২০১৭ সালে অবশেষে সাতপাকে বাঁধা পড়েন বিরাট – অনুষ্কা (Anushka Sharma)।

বাবার মৃত্যু বিরাটকে ( Virat Kohli) জুগিয়েছিল আগুন। যে আগুন চিনতে শিখিয়েছিল কঠিন বাস্তবকে। যে আগুনে পুড়িয়ে নিজেকে আরও পরিশীলিত করে তুলেছিলেন বিরাট। নিজেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন এভারেস্ট সমান উচ্চতায়। আর অনুষ্কার প্রেম অহরহ স্নিগ্ধ, শীতল ছায়া জুগিয়ে গেছে বিরাটকে (Virat Kohli)। তাই বোধহয় সমালোচকদের আগুনে বাক্যবাণ তার গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচ লাগাতে পারেনি। বছর দুয়েক পর রানের খরা কাটিয়ে ফর্মে ফিরেছেন বিরাট। বিশ্বকাপেও শোনা যাচ্ছে তার ব্যাটের সিম্ফনি। এখনও নিশ্চয় তার মনে পড়ে ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর অথবা ২০১৩ সালের সেসব বসন্ত বিকেলের কথা। সেসব দিনের কথা ভেবে এখনও কী চোখের জল ফেলেন বিরাট? সেই অশ্রু কখনও বিষাদের কখনও বা আনন্দের। বিরাট, এখনও অনেক পথ হাঁটা বাকি বন্ধু। সেই চোখধাঁধানো কভার ড্রাইভ দেখাও বাকি অনেক…।

হোম
জয়েন গ্রুপ
স্থানীয় খবর
জয়েন গ্রুপ
গুগল নিউজ