আসন্ন রাখী বন্ধন উৎসব। সারাদেশে এটি ভাই-বোনের উৎসব হিসাবে বিবেচিত হলেও বাঙালির কাছে এর এক অন্য রকম মাহাত্ম্য। কারণ তার সঙ্গে জড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অনন্য ইতিহাস৷
স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস ঘাটলে বহু মানুষের অবদান ও কৃতিত্ব চোখে পড়ে। কিন্তু দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বাঙালির মতো আত্মত্যাগ ও অবদান বোধহয় বিরল। আজও আন্দামানের সেলুলার জেলের কয়েদি তালিকা দেখলেই তা বোঝা যায়। যখন ইংরেজ শাসনের চাবুক তীব্র হয়েছে, গর্জে উঠেছে বাঙালার বাঘেরা। আর সে জন্য বাংলাকে সহ্যও করতে হয়েছে প্রচুর অত্যাচার। বাঙালিই প্রথম প্রদেশ যেখানের মানুষজন ইংরেজদের কেরানী বানানোর শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইংরেজ শিক্ষাকেই আয়ত্ত করে তাদের চোখেই চোখ রেখে জবাব দিয়েছিল। মুশকিলে পরেছিল ইংরেজ শাসন। বাংলা ও বাঙালির ঐক্যকে দুর্বল করলে যে আদতে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মেরুদণ্ডটিকেই ক্ষতিগ্রস্থ করা যাবে তা ইংরেজ শাসন বুঝতে পেরেছিল। ফলাফল ১৯০৫-এর ১৯ জুলাই। ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা করলেন। তার আগে ১৯০৪ সালের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবের ঘোষণা। ধর্মের ভিত্তিতে বাংলা-প্রদেশকে বিচ্ছিন্ন করে রাজনৈতিক ও শোষণতান্ত্রিক উদ্দেশ্য কায়েমের প্রচেষ্টা। বাংলা গর্জে উঠলো।
সেই সময়ে গর্জে উঠলেন রবীন্দ্রনাথ। একের পর এক স্বদেশী কবিতা তাঁর কলমের আগুন জ্বাললো। এরপর ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর, ৩০শে আশ্বিন বাঙালির ঐক্যবন্ধনের দিন। রাস্তায় বেরিয়ে এলেন তিনি। খালি পায়ে হেটে সঙ্গীদের নিয়ে প্রথমে গঙ্গাস্নান। তারপর রাস্তায় পথে, আস্তা বলের সহিসদের, রাস্তায় রাস্তায় সকলকে শুরু করলেন রাখী পড়ানো। সঙ্গে সম্প্রীতির আলিঙ্গন। লোকে লোকারণ্য রাস্তাঘাট। বাঙালির বাড়িতে বাড়িতে সেদিন অরন্ধন। তারপর চিৎপুরের বড়ো মসজিদ। অবন ঠাকুরদের সঙ্গে নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে সকল ইমামদের হাতে পড়িয়ে দিলেন রাখী। আকাশ বাতাস মুখরিত হল রবি-কন্ঠে “বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল—পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান!” বাঙালির সম্মিলিত প্রতিবাদে রদ হল বঙ্গভঙ্গ। রাখীবন্ধন তাই বাঙালীর সম্প্রীতির বন্ধন।