ফুরিয়েছে স্কুলের প্রয়োজনিয়তা

ফুরিয়েছে স্কুলের প্রয়োজনিয়তা

অভিজিৎ বেরা: গত দু বছর ধরে প্রযুক্তির দৌলতে বাড়িতেই এসেছে স্কুল কলেজ। মোবাইল বা মাউসের এক ক্লিকে জ্ঞানের ভান্ডারে প্রবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।আমার সমসাময়ীক (২০০৯) যারা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি তখন রচনা লিখতে হত, বেশ কিছু বিষয় দেওয়া থাকত তার মধ্যে একটি বিষয় সেই সময় খুব আসত “কম্পিউটার ও মানব সভ্যতা”। তখন এই বিষয়ে ভেবে ভেবে লিখতে হতো, কারন আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম্পিউটার ছিল হাতে গোনা আর ফোন বলতে ঐ নকিয়ার ১১১০। তাই আজ যা হচ্ছে তা সেদিন ছিল আমাদের কাছে কল্পনা।

সেদিন লিখেছিলাম বটে, কিন্তু কখনো ভাবিনি এভাবেই জ্ঞানের বিশ্বকোষ একদিন খুলে যাবে হাতের মুঠোফোনে, কিন্তু আজ তা বাস্তব।

গত প্রায় দু বছর ধরে বন্ধ স্কুল, শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসেই নাচ-গান-আবৃত্তি শিখেছে ঐ হাতের মুঠোফোনে বা মাউসের ক্লিকে, চলেছে পড়াশোনা, হোমওয়ার্ক হয়েছে গুগলমিটে। বাজারে এসেছে একের পর এক Online Learning platform. কিন্তু এখানেও আশ্চর্য হয়নি। আশ্চর্য হয়েছিলাম যখন দেখলাম আমার ছোট ছোট ভাই-বোনেরা মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক এর মতো বড়ো বড়ো পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে সার্টিফিকেট পেয়ে উচ্চতর শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে গেল। এবং এখন অনলাইনে ক্লাস করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দেওয়া শিক্ষার্থীটির সার্টিফিকেট যা গুরুত্ব, আমরা যারা রোদে-জলে-পায়ে হেঁটে স্কুলে গিয়ে-শিক্ষক মশাইদের বকাঝকা খেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছি সেই সার্টিফিকেটের গুরুত্ব এক।

তখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করে তবেকি ফুরিয়েছে স্কুলের প্রয়োজনিয়তা?
আর এর উত্তর একটাই হ্যাঁ, গতানুগতিক ধারার স্কুলের প্রয়োজনীয়তা এবার শেষ হয়েছে। সভ্যতার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছুর পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু স্কুলের পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু গত দু বছরে করোনা নামক অতিমারি মানুষকে বুঝিয়ে দিল আর প্রয়োজন নেই গতানুগতিক ধারার স্কুলের। এবার জোর দেওয়া হোক Online education system এর উপরে।

আর বর্তমান সময়ে Online education system সবথেকে সস্তা ও সহজলভ্য।এর জন্য লাগেনা কোন স্কুল বিল্ডিং। একজন শিক্ষক চাইলেন ১০০ বেশি এবং যতখুশি ছাত্র-ছাত্রীদের একসঙ্গে পাঠদান করাতে পারেন। শিক্ষার্থীদের যেতে হবেনা স্কুলে। বাড়িতেই পরিবার পরিজনের সঙ্গে থেকেই একজন শিক্ষার্থী তার বিদ্যাচর্চা চালিয়ে যেতে পারেন।

Online education system এ সরকার কম খরচে দেশের অনেক বেশী মানুষকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলতে পারেন

Online education system লাগেনা কোন স্কুল বিল্ডিং-ফলে সরকার এই টাকায় শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির উন্নয়নে খরচ করতে পারেন। যারা অনলাইনে অভ্যস্ত নয় বা যেখানে প্রযুক্তিগত সমস্যা আছে সেইসব ছাত্র ছাত্রীদের জন্য প্রতি ব্লকে একটি করে অত্যাধুনিক স্কুল রাখলেই যথেষ্ঠ।ফলে অনলাইনের সঙ্গে অফলাইনে শিক্ষা গ্রহনের ব্যবস্থা থাকছে।

নেই অতিরিক্ত শিক্ষকের প্রয়োজন- এই ক্ষেত্রে ব্লকে ব্লকে তৈরী স্কুল গুলোতেই শুধুমাত্র শিক্ষকেরা থাকছেন এবং যেহেতু স্কুলের সংখ্যা কমছে সেহেতু শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা কমাটাও স্বাভাবিক। এবং আগেও বলেছি Online education system শিক্ষক-শিক্ষিকারা ১০০ বেশি এবং যতখুশি ছাত্র-ছাত্রীদের একসঙ্গে পাঠদান করাতে পারেন। শিক্ষক শিক্ষিকা কমে যাওয়ায় কমবে খরচ। এই টাকা সরকার চাইলে যেসমস্ত এলাকায় এখনো online education system এর জন্য প্রযুক্তি পৌঁছায়নি সেখানে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটে পৌঁছে দিতে পারেন।

online education system এর মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষিত হবেন দেশের কোটি কোটি মানুষ। শিক্ষা পৌঁছে যাবে মানুষের ঘরে ঘরে, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে সমাজ। দেশের উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব কতটা আমরা সকলেই জানি, তাই স্বাধীনতার এতো বছর পরেও যেখানে শিক্ষা ব্যবস্থা পৌঁছে যেতে পারেনি সেখানে online education system যাদুর ছড়ি হয়ে উঠতে পারে। আর ভারতের মতো দরিদ্র দেশের মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে কম খরচে সব থেকে উপযোগী মাধ্যম online education system.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হোম
জয়েন গ্রুপ
স্থানীয় খবর
জয়েন গ্রুপ
গুগল নিউজ