রামন এফেক্ট আবিষ্কারের দিন ২৮ শে ফেব্রুয়ারি দিনটি সারা দেশে পালিত হয় জাতীয় বিজ্ঞান দিবস হিসেবে। প্রখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন ১৯২৮ সালের এই দিনেই কলকাতায় বসে এই আবিষ্কার করেছিলেন। যার জন্যতিনি পরে নোবেল পুরষ্কার পান। এই আবিষ্কারের গল্পও বেশ চমকপ্রদ।
পদার্থবিদ্যার তুখোড় ছাত্র চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন মাত্র ১৮ বছর বয়সে যোগ দেন অর্থ দফতরের কাজে৷ কর্মস্থল ছিল কলকাতা৷ কিন্তু পদার্থবিদ্যায় মেতে থাকা যুবকের পক্ষে অর্থ দফতরের কাজে মিলছিল না তৃপ্তি। কলকাতার ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স এর গবেষণাগারে চলতে থাকে তাঁর গবেষণা। এক সময় ইস্তফা দেন অর্থ দফতরের কাজে৷ ১৯১৭ সালে স্যার আশুতোষ মুখার্জির আহ্বানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। এরই মধ্যে ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি কংগ্রেসে যোগ দিনে জাহাজে লন্ডন যাওয়ার সময় সমুদ্রের নীল জলরাশি থেকে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে ‘কেন সমুদ্রের জল নীল?’ প্রাথমিক ভাবে তাঁর মনে হয়েছিল আকাশের প্রতিফলনের জন্যই এমন রং৷ কিন্তু পোলারাইজড প্রিজমের মাধ্যমে আকাশের রঙের প্রতিফলন রোধ করেও তিনি দেখেন জলের রং নীল। সমুদ্রের বিভিন্ন গভীরতা থেকে জল সংগ্রহ করে কলকাতা নিয়ে এসে গবেষণা শুরু করেন।
গবেষণার কাজের জন্য আত্মবিশ্বাসী রামন ১৯২৫ সালে জি ডি বিড়লার কাছে স্পেক্টোগ্রাফ কেনার জন্য টাকা চেয়ে চিঠিতে লেখেন, “আমি যদি এই যন্ত্রটা পাই তাহলে ভারতের জন্য নোবেল পুরস্কার এনে দিতে পারবো।” রামন দেখেন, আলো হল তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ। সমস্ত পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু-পরমানুর সমন্বয়ে গঠিত। যে কোনো রঙের আলো হল তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ, যা কোনো বস্তুর উপর পড়লে সেই বস্তুর অনুগুলি স্পন্দিত হয়। কোনো আলো বস্তুর উপর পড়লে তা বিচ্ছুরিত হয় তিনটি বিকিরণে- বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো, কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো এবং সম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো। আবিষ্কার হয় ‘রামন এফেক্ট’। জানা যায়, সমুদ্রের জল নিজেই আলো বিচ্ছুরণ করে, তাই জলের রঙ নীল।