পূর্ব বর্ধমানের (East Burdwan) বড়শুলের (Borshul) এককালের জমিদার দে বাড়ি (Borshul Dey Barir Durga Puja)। এখন অতীতের আভিজাত্য, ঐতিহ্য, ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশাল বিশাল অট্টালিকা। পলেস্তারা খসে পড়েছে অনেক জায়গায়। ইটেও ক্ষয় ধরেছে। তবুও নিষ্ঠা ভরে প্রতিবছর হয় দেবীর পুজোর (Durga Puja) আয়োজন। এখানে দেবী গৌরী ও মহাদেব একত্রে অধিষ্ঠান করেন হরগৌরী (HaraGouri) রূপে। সেই রূপেই আড়াইশো বছর ধরে দে বাড়িতে এখনও পুজো পান দেবী।
দে পরিবারের একসময় তাম্বুল ও লবণের কারবার ছিল। দামোদর নদ ব্যবহার করে বড় বড় বজরায় পণ্য ক্রয়বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হত। কথিত আছে, জমিদার যাদবচন্দ্র দে-র আমলে গঙ্গাসাগর যাত্রী সাধুসন্তরা এখানে আস্তানা নিয়েছিলেন। পরিবারের এক কন্যাশিশু তাঁদের ঝোলা থেকে হরগৌরী প্রতিকৃতি তুলে নেয়। তারপর থেকেই হরগৌরী পুজো শুরু। বর্তমানে সেই সমস্ত দিন অতীত। যদিও জমিদারির নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে বড়শুলের একটা বড় অংশে। শক্তিগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে বড়শুল পর্যন্ত রাস্তাটি এই পরিবারেরই সদস্য মনমোহন দে-র নামে। এখন রাখা হয়েছে ট্রাস্টি। পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই অন্যত্র। কালের সাক্ষ্য নিয়ে ভগ্নপ্রায় বাড়িতেও অনেক বর্তমান সদস্য বাস করেন। যদিও পুজোর সময়ের পূর্বতন জৌলুস বজায় না থাকলেও অনেকেই আসেন মিলিত হতে।
দে পরিবার বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ায় গোস্বামী মতে পুজো হয়। দেবী এখানে দশভুজা নন। মহিষাসুরও নেই। দেবীর অবস্থান মহাদেবের বাম ঊরুতে। সঙ্গে থাকা গণেশ ও কার্তিকের বাহন থাকলেও লক্ষ্মী ও সরস্বতীর বাহন থাকে না। বলি প্রথাও এই পূজায় অভিনব। সপ্তমীতে গোটা ছাঁচিকুমড়ো বলি, অষ্টমীতে ছাগবলি হয়। নবমীতে তিনটে ছাঁচিকুমড়ো, চারটি শসা, বাতাবি লেবু ও মূলসহ তিনটি আখ বলি দেওয়া হয়। পূজার শুরু নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। দশমীতে দেবীমূর্তি কাঁধে নিয়ে গ্রাম পরিক্রমা করা হয়। তারপর হয় প্রতিমা নিরঞ্জন।