সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ব্রকলির ব্যবহার এবং চাষ

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ব্রকলির ব্যবহার এবং চাষ

বাঙালীর রান্নাঘরে এখন জনপ্রিয় একটি সবজি হলো ব্রকলি ।ফুলকপির মত দেখতে এই সবজিদেখতে হুবহু ফুলকপির মতো, রঙটাই যা শুধু আলাদা। শীতকাল হলেই মিষ্টি সবুজ রঙের এই সবজিটির দেখা মেলে বাজারে, নাম ব্রকলি। শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এই সবজিটি খাওয়া কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষেও খুবই উপকারি।

ফুলকপি (Cauliflower) বা বাঁধাকপির তুলনায় ব্রকলিতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি ছাড়াও রয়েছে ক্যারোটেনয়েড , লুটেইন,বিটা-ক্যারোটিন ফ্ল্যাভনয়েড, যা কিনা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবেই চিহ্নিত করেন চিকিৎসকরা।

শীতের দুপুরের পাস্তা হোক বা ডিনারের স্যুপ, ব্রকলি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ছড়িয়ে দিলেই আপনার খাবারের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। এটা শুধু কথার কথা নয় কিন্তু। ব্রকলিতে থাকা পুষ্টিগুণের মাত্রা জানলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

পুষ্টি গুন (Nutrition) :
প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রকলিতে:

প্রোটিন থাকে ৩.৩ গ্রাম

ফ্যাট থাকে ০.১ গ্রাম

ক্যালসিয়াম থাকে ১৫০ মিলিগ্রাম

কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাক ৫.৫ গ্রাম

আয়রন থাকে ১.৬ মিলিগ্রাম

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ব্রকলি রাখলে যে যে উপকার পাবেন নিচে তা আলোচনা করা হল।
১) খারাপ কোলেস্টরল কমাতে এবং ভাল কোলেস্টরল বাড়াতে সাহায্য করে –
কোলেস্টরলের মতো সমস্যা কিন্তু হৃদরোগের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

নিয়মিত ব্রকলি খেলে কিন্তু তা আপনার শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে শুরু করে।

আর ভালো কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় আপনার অজান্তেই।

২) হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে –
ব্রকলি হার্টের জন্য কিন্তু খুবই ভাল। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যদি নিজের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ব্রকলি রাখেন তাহলে তা তার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

কারণ ব্রকলিতে রয়েছে আইসোথিওসায়ানেটস এবং সালফোরাফেন’এর মতো অ্যান্টিইনফ্লেমেটারি উপাদান, যা হৃদপিন্ডে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে থাকে।
ক্যালসিয়ামের ভরপুর উৎস –
আগেই বলেছি যে, ব্রকলি হল ক্যালসিয়ামের ভরপুর উৎস।

স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া বা বিশেষ করে মহিলাদের ব্রকলি খাওয়া খুবই দরকার।

এর ফলে শরীরের হাড় এবং দাঁত মজবুত হয়ে থাকে।

যার ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্ট পেইনের মতো সমস্যাকে সহজেই দুরে রাখা যায়।

৪) শরীরে অ্যালার্জি এবং প্রদাহ রোধ করে –
ব্রকলিতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারি উপাদান।

যা হার্টকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যালার্জি থেকে সংক্রমণের প্রবণতা রোধ করে।

শুধু তাই নয়, শরীরে বিভিন্ন প্রদাহ থেকে ও বাঁচাতে সাহায্য করে।

৫) ডায়াবেটিক পেশেন্টরা অবশ্যই খান
ব্রকলি ডায়াবেটিক পেশেন্টদের জন্য এক প্রাকৃতিক ওষুধ বলা চলে।

ব্রোকলি চাষে প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি:

সাধারণভাবে যে ধরনের জলবায়ুতে ফুলকপির চাষ হয় সেখানে ব্রোকলিও ভাল জন্মে। তবে ব্রোকলির পরিবেশিক উপযোগিতার সীমা একটু বেশি বিস্তৃত৷ জল জমে না এরূপ উঁচু জমি, উর্বর দোআঁশ মাটি হলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। ব্রোকলির গাছ ১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভাল জন্মে৷ ব্রোকলি এপ্রিল মাসের পরেও ভালো ফলন দিতে পারে। দেশের সব অঞ্চলেই ব্রোকলি চাষ করা যেতে পারে। সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন জমি ব্রোকলি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।

ব্রোকলি এর উল্লেখযোগ্য জাত:

ব্রোকলি শুধুমাত্র সবুজ রঙের হয় না। এর বিভিন্ন রঙের বিভিন্নতা আছে। বেগুন বা সাদা রঙের ব্রোকলিও আছে। বেগুনি রঙ্গের জাত গুলো বেশি শক্ত এবং সবুজ রঙ্গের চেয়ে কম স্বাদের হয়ে থাকে। সাধারণত আঁটসাঁটো মাথার ছোট আঁকারের গাড় সবুজ বা নীলাভ সবুজ রঙের ব্রোকলি জাতের চাহিদা বেশি।

ব্রোকলি চাষে কিভাবে চারা তৈরি করবেন
পাতা পচা সার বা গোবর সার ১ ভাগ, বালু ১ ভাগ ও মাটি ২ ভাগ মিশিয়ে ব্রোকলির বীজতলা তৈরি করতে হয়। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত ব্রোকলির চারা রোপন করা যায়। কম বয়সের চারা দ্রুত বাড়ে। সেপ্টেরম্বর মাসে যখন বৃষ্টি কমে আসে তখন উঁচু জমি দেখে বীজতলা করা যায়। বীজতলায় ১ মিটার চওড়া করে বেড তৈরি করতে হবে। বেডের মাটি ভাল করে কুপিয়ে ঘাস আগাছা পরিষ্কার করে প্রতি বর্গমিটারে ৪ থেকে ৫ কেজি গোবর সার মাটির সাথে মিশিয়ে বেড সমান করে কয়েকদিন রেখে দিতে হবে। আগাম মৌসুমে বৃষ্টি হলে বীজতলায় পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বৃষ্টিসময় চারাকে রক্ষা করতে হবে। চারা রোপনের সময় হিসাব করে চারা উৎপাদন করতে হবে। এক হেক্টর জমির চারার জন্য বীজতলায় ২৫০ থেকে ৪০০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। মনে রাখবেন মাস খানেকের কম বয়সী চারা লাগবে।

ব্রোকলি চাষের উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন:

ব্রোকলি ঠান্ডা আবহাওয়ার ফসল বলে বাংলাদেশে শুধু রবি মৌসুমে এর চাষ হয়। ব্রোকলির চাষ অবিকল ফুলকপির মতোই। সারাদিন রোদ পায় এমন জমি ব্রোকলি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। লাঙ্গল বা টিলার দিয়ে মাটি কয়েক দিন রোদে ফেলে রাখতে হবে। সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য বেডে চারা রোপণ করাই ভালো। সেচ দেয়া এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা অত্যন্ত জরুরি। চাষ দেয়ার সময় শতকে ২৫ থেকে ৪০ কেজি পচা গোবর বা খামারজাত সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। মাটির সব ঘাস, শিকড় আগাছা, আবর্জনা, পরিষ্কার করে ঢেলা ভেঙে ফেলে সমান করতে হবে। চারা লাগানোর পর চারার গোড়ায় অবশ্যই পানি দিতে হবে। চারা রোপনের পূর্বে গোড়ার দিকে দু-একটি বড় পাতা কেটে বাদ দিলে চারা কম মরবে। চারার মাথা থেকে নতুন পাতা ছাড়া শুরু হলেই বুঝতে হবে চারা মাটিতে লেগে গেছে ।

ব্রোকলি চাষে আগাছা ও নিড়ানি:

সার দেয়ার ঠিক আগে আগাছা নিড়ানো ভালো। এতে সার ভালভাবে মাটির সাথে মিশতে পারে এবং সারের অপচয় কম হয়। গাছের পাতা পরিপূর্ণভাবে ছড়ানোর পূর্ব পর্যন্ত জমি অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। তবে মনে রাখবেন ব্রোকলি একটি অগভীরমূলী ফসল। তাই গাছের গোড়ার কাছাকাছি মাটি ৫ সেন্টিমিটারের বেশিগভীর করে নিড়ানো যাবে না। যদি বেড বা জমির মাটি শক্ত হয়ে চটা বেঁধে যায় তবে অবশ্যই নিড়ানি বা কোদাল দিয়ে তা ভেঙে দিতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হোম
জয়েন গ্রুপ
স্থানীয় খবর
জয়েন গ্রুপ
গুগল নিউজ