দক্ষিণ পূর্ব রেলের কর্তারা দায়িত্ব নিয়ে ১২৮২৭ আপ/১২৮২৮ ডাউন হাওড়া-পুরুলিয়া-হাওড়া এক্সপ্রেসকে শেষ করছেন

দক্ষিণ পূর্ব রেলের কর্তারা দায়িত্ব নিয়ে ১২৮২৭ আপ/১২৮২৮ ডাউন হাওড়া-পুরুলিয়া-হাওড়া এক্সপ্রেসকে শেষ করছেন

লেখা-সুমন নায়ক

কেন এই প্রসঙ্গ?

যারা জানেন না তাদের বলি, এই ট্রেনটি আমাদের রুটের সবচেয়ে পুরানো ট্রেনগুলোর মধ্যে একটি (১৯৮৩ সালে প্রথম চালু হয়)। সেই সময় এই রুটে সারাদিনে ২-৩টি ট্রেন চলত। এই ট্রেনটির সময়নিষ্ঠা ছিল অসাধারণ। এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জন্য এই ট্রেনটিকে লাইফলাইন বলা চলে। তারা এই ট্রেনে সকালে ‘মাল করতে’ কলকাতা যায়। সন্ধ্যাবেলায় এই ট্রেনেই আবার ‘মাল করে’ কলকাতা থেকে ফিরে আসে। রেক শেয়ার করার যুগেও এই ট্রেনের জন্য একটি ডেডিকেটেড রেক বরাদ্দ ছিল। প্রাইমারি মেইনটেনেন্স হত দক্ষিণ পূর্ব রেলের সাঁতরাগাছি কারসেডে। সকালে ডাউন ট্রেন ৫:৩০ মিনিটে পুরুলিয়া স্টেশন ছেড়ে প্রথমে ১১:৪০ মিনিটে ও ট্র্যাক আপগ্রেড হবার পর ১১:২০ মিনিটে হাওড়া ঢুকত। কারসেডে মেইনটেনেন্স করার পরে সেই রেক আবার আপ ট্রেন হয়ে বিকেল ৪:৫০ মিনিটে হাওড়া ছেড়ে বেরিয়ে পড়ত। টাইম গ্যাপ ও ডেডিকেটেড রেক থাকার জন্য ডাউন ট্রেন লেটে ঢুকলেও আপ ট্রেনের সময়ের হেরফের হতো না। আর আপ ট্রেনের জন্য ডাউন ট্রেনের সময়ের হেরফের হবার প্রশ্নই ছিল না।

আরও পড়ুন:  জনজীবন স্তব্ধ করে আবারও অধিকার আদায়ে পথে নামছে কুড়মীরা – The Kurmi are once again taking the road to get their rights by suspending the public life

ওদিকে হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসকে (ভায়া আদ্রা) প্রথমে ছট স্পেশাল হিসেবে চালানো হয়। এই সময় এই ট্রেনের রেকটাকে খুব সম্ভবত সিমলিপাল বা অন্য কোন ট্রেনের সাথে শেয়ার করা হত। পরে ট্রেনটাকে স্থায়ী করার পর, পূর্ব রেলের আসানসোল-দূর্গাপুর রুটে হাওড়া রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসকে প্রথমে বন্ধ করা হয়। এই সময় রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস তিনদিন আসানসোল রুটে আর বাকি তিনদিন খড়গপুর-টাটানগর রুটে চলত। এই দুটো ট্রেনের জন্য (আপ ও ডাউন) দুটি রেক থাকলেও, ডাউন ট্রেন হাওড়া ঢোকার পর মোটামুটি ৪০-৪৫ মিনিট বাদে আপ ট্রেন ছাড়ত। রেকের প্রাইমারি মেইনটেনেন্স হত হাতিয়া স্টেশনে। ফলে তেমন কোন অসুবিধা ছিল না। টাটানগর রুটের ডাউন ট্রেন হাওড়া ঢুকতে দেরি করলে, আপ ট্রেনের ছাড়তে কিছুটা দেরি হত।

কিন্তু আসানসোল রুটে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসকে বন্ধ করার পর,ও আদ্রা রুটে চালু করা স্পেশাল ট্রেনটিকে স্থায়ী ইন্টারসিটি ট্রেনের রূপ দেবার পর, দক্ষিণ পূর্ব রেলের কর্তাদের মাথায় একটা অদ্ভুত বুদ্ধি ঢোকে। তারা রাঁচি ইন্টারসিটি (ভায়া খড়গপুর-টাটানগর ও ভায়া আদ্রা)আর পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের জন্য মোট দুটি রেক বরাদ্দ করে‌। ডাউন রাঁচি ইন্টারসিটির হাওড়া ঢোকার টাইম বিকেল ৩:১৫, অন্যদিকে আপ ইন্টারসিটির হাওড়া ছাড়ার টাইম দুপুর ১২:৫০। এদিকে ডাউন পুরুলিয়া এক্সপ্রেসের হাওড়া ঢোকার টাইম সকাল ১১:২০, ছাড়ার টাইম বিকেল ৪:৫০। ফলে ডাউন পুরুলিয়া হাওড়া ঢুকে হয়ে যায় আপ রাঁচি ইন্টারসিটি। অন্যদিকে ডাউন রাঁচি ইন্টারসিটি হাওড়া ঢুকে হয়ে যায় আপ পুরুলিয়া। রেকের প্রাইমারি মেইনটেনেন্স হাতিয়ায়! ফলে ডাউন পুরুলিয়া লেট তো আপ রাঁচি ভোগে গেল, আর ডাউন রাঁচি লেট তো আপ পুরুলিয়া ভোগে গেল! রেক মেইনটেনেন্স একদিনের জায়গায় দুদিন অন্তর অন্তর হয়!

আরও পড়ুন:  Longest Railway Platform : খড়গপুর এখন থার্ড বয়, যদিও পৃথিবীর দীর্ঘতম ৩টি রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মই ভারতে

দক্ষিণ পূর্ব রেলকে বলে লাভ নেই। রেলের যে যাত্রী পরিবহনের দায় নিতে উৎসাহ নেই সেটা স্পষ্ট। দায় আমাদের সাংসদদের। তারা সংসদে সিম্পলি টাইমপাস করতে, লোকদেখানো ঝগড়া করতে আর ঘুমোতে যান। এদিকে ঝাড়খণ্ডের সাংসদরা বাংলার লোকাল ট্রেন/এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোকে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা বা দুমকা অব্দি এক্সটেনশন করিয়ে নিচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলোর স্টপেজ বাড়িয়ে নিচ্ছেন (যদিও আমি এটার বিরোধী)। ভাবুন, ভাবুন, আর কবে ভাববেন!!

হোম
জয়েন গ্রুপ
স্থানীয় খবর
জয়েন গ্রুপ
গুগল নিউজ