কলকাতাকে অনুসরণ করে জেলা শহর ও মফস্বলগুলিও থিমের পুজোয় (Durga Puja) মেতে উঠেছে। কিন্তু আমাদের বাংলার গ্রামগুলির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে কত বিখ্যাত, পরিচিত, অপরিচিত পুজো। বিচিত্র তাদের নিয়ম, রীতি। গ্রাম বাংলার সেই সব পুজোয় (Gram Banglar Durga Puja) একই সঙ্গে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রীতিনীতির মেলবন্ধন। তেমনই এক ঐতিহ্যমন্ডিত পুজো কাঁথির (Contai) কিশোরনগর গড়ের (Kishorgarh) জমিদার রায় বাড়ির দুর্গাপুজো(Roy Family Puja)। প্রায় তিনশো বছর ধরে যে পুজো আজও বহন করে চলেছে নিজের ঐতিহ্যের স্বকীয়তা। এখানে দেবীর ঘট বসে পশ্চিম মুখী। শুধু তাই নয়, পুজোর হোমাগ্নি জ্বালানো হয় আতস কাচে সূর্যের আলো ফেলে।
প্রায় ১৭২০ সাল নাগাদ রাজা যাদবরাম রায় এই পুজোর শুরু করেন। তিনি নাকি স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। সারা বাংলায় একমাত্র এখানেই দেবীর ঘট পশ্চিম মুখে স্থাপিত হয়। এই রীতির পিছনেও আছে কাহিনী। কথিত আছে, দুর্গাপঞ্চমীর গভীর রাতে দেবী স্বয়ং ষোড়শী বেশে নরোত্তম বর নামে এক মাঝির নৌকায় উঠে খাল পাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করেন। পাড়ানি হিসেবে মাঝিকে পুঁথি দান করে কিশোরনগর গড়ে গিয়ে দুর্গামন্দিরে চণ্ডীমঙ্গল গাইতে নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই সময়ে জাতপাতের প্রকোপ ছিল প্রবল। ধীবর সম্প্রদায়ের হওয়ায় মাঝিকে মন্দিরে উঠতে দেওয়া হয়নি। তখন তিনি দেবীর মন্ডপের পিছনে পশ্চিম দিকে বসেই গান গাইতে থাকেন। স্থানীয়দের বিশ্বাস, সেই সময়ে দেবীর প্রতিষ্ঠিত ঘট পশ্চিম দিকে ঘুরে যায়। রায় বাড়ির সদস্যরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। এরপর থেকেই পশ্চিম মুখো ঘটেই হয়ে আসছে দেবীর পূজা।
দেবীর হোমের হোমাগ্নি এখানে জ্বালানো হয় অভিনব ভাবে৷ হোমকাষ্ঠে আতস কাঁচ নির্মিত দর্পণের মাধ্যমে তীর্যকভাবে ফেলা হয় সূর্য রশ্মি। তাতেই জ্বলে ওঠে হোমের আগুন। পশুবলি প্রথাও বহু বছর বন্ধ রায় বাড়ির পুজোয়। ১৯৮৫ সালের বন্যায় রাজবাড়ির গোশালা ভেঙে পড়ে। গোশালার দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় বলির জন্য উৎসর্গীকৃত মহিষের। তারপর থেকেই পুজোয় বন্ধ হয়ে যায় পশুবলি। পরিবর্তে রীতি মেনে আখ ও চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়।