বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব(Durga Puja)। গ্রাম বাংলার (Gram Banglar Durga Puja) আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রাচীন পুজো৷ বিচিত্র তাদের রীতিনীতি। আবার পুজোর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিশ্বাস, আলৌকিক ঘটনা, কথন প্রভৃতি। যেগুলি এই সব বিখ্যাত অথবা অশ্রুত পুজোগুলোকে আরও ঐতিহ্যমন্ডিত করে তুলেছে। তেমনই এক পুজো নদিয়ার (Nadia) যোগনাথতলার ভট্টাচার্য বাড়ির সাড়ে তিনশো বছরের প্রাচীন ‘লাল দুর্গা’র পুজো (Lal Durga)।
প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে অবিভক্ত বাংলাদেশের মিতরা গ্রামে ভট্টাচার্য পরিবার এই পুজোর প্রচলন করেন। তারপর তাঁরা চলে আসেন নদিয়ার নবদ্বীপে। ১২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নবদ্বীপের যোগনাথতলায় এই পুজো হয়ে আসছে। পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, প্রতিমার গাত্রবর্ণ টকটকে লাল। তাই এই দুর্গা ‘লালদুর্গা’ নামেও পরিচিত। একচালা সাবেকি রাজরাজেশ্বরী রূপী প্রতিমার বাহন নরসিংহ। প্রতিমার সঙ্গে থাকা কার্তিক ও গণেশের অবস্থান বিপরীত। গণেশ দেবী দুর্গার ডানদিকের পরিবর্তে বাম দিকে এবং কার্তিক বামদিকের পরিবর্তে ডানদিকে।
প্রতিমার গাত্রবর্ণের রক্তবর্ণ হওয়ার পিছনে রয়েছে সাবেকি কাহিনী। কথিত আছে, দেবীর গায়ের রং আগে ছিল হলুদ। সপ্তদশ শতাব্দীতে ভট্টাচার্য পরিবারের তৎকালীন গৃহকর্তা রাঘবরাম ভট্টাচার্য নবমীর দিন চণ্ডীপাঠ করার সময় পাঠে ভুল হয়। তারপর রাঘবরামের পুত্র রামভদ্রও পূর্ব দিকে মুখ করে পিতার সঙ্গে চণ্ডীপাঠে বসেন। এরপর ধীরে ধীরে দক্ষিণমুখী দেবী প্রতিমা ঘুরে যান পশ্চিমমুখে, রামভদ্রের দিকে। চণ্ডীপাঠ চলতে চলতেই ক্রমে রক্তবর্ণ হতে থাকেন দেবী এবং রক্তশূণ্য হতে থাকেন রামভদ্র। চণ্ডীপাঠ শেষ হতেই রামভদ্র সেখানেই লুটিয়ে পড়েন প্রাণশূন্য হয়ে। মৃন্ময়ী মূর্তি হয়ে ওঠে টকটকে লাল। সেই থেকে ভট্টাচার্য বাড়িতে দেবীর পুজোয় চণ্ডীপাঠ হয় না। নিষিদ্ধ পশুবলিও। দেবী পুজো পান বৈষ্ণব মতে।