ঝাড়গ্রাম জেলার (Jhargram) গোপীবল্লভপুর ১ নম্বর ব্লকের (Gopiballavpur) ঝাড়খন্ড রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া জানাঘাটি গ্রামের বক্সী পরিবারের (Baxi Family) দুর্গা পুজো (Durga Puja) অতিক্রম করেছে ১৬০ বছর৷ কিন্তু আজও ফিকে হয়নি তার ঐতিহ্য৷ জানাঘাটি গ্রামের বক্সী পরিবারের এই পুজোতে বাংলা এবং ঝাড়খন্ড রাজ্যের প্রায় পনেরোটি গ্রামের মানুষ অংশ নেন আজও।
জানাঘাটি গ্রামটি ভৌগোলিক ভাবে জেলা থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। পুরো গোপীবল্লভপুর ১ নম্বর ব্লক সুবর্ণরেখার দক্ষিণ তীরে, কিন্তু জানাঘাটি সহ ব্লকের মাত্র চারটি গ্রাম ঝাড়খন্ড রাজ্যের লাগোয়া সুবর্ণরেখা নদীর অপর দিকে। তাই শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো হয়ে উঠেছে দুই রাজ্যের মেলবন্ধন। বক্সী পরিবার বহু আগে ছিল মোহান্তি পরিবার। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গোপীবল্লভপুর ময়ূরভঞ্জ রাজাদের অধীনে থাকার সময় মোহান্তি পরিবারের পূর্বসুরিদের প্রতি খুশি হয়ে বকশিস দেন রাজা। তা থেকেই ‘বক্সী’ হিসাবে পরিচিত হয় মোহান্তি পরিবার। ১৬০ বছর আগে পারিবারিক পুজো শুরু করেন জানাঘাটি গ্রামের বক্সী পরিবারের সদস্য শ্রীহরি বক্সী। তারপর থেকেই বক্সী পরিবার নিষ্ঠাভরে আয়োজন করে চলেছে পুজোর। যদিও কালের নিয়মে মূল বাসস্থান থেকে রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রবাসী আজকের বক্সী পরিবারের প্রজন্মরা। কিন্তু পুজোর সময় প্রায় সকলেই একত্রিত হন জানাঘাটির গ্রামে।
একসময় খড়ের চালায় শুরু হয়েছিল এই পারিবারিক পুজো। এখন পুজো হয় পাকা দুর্গাদালানে। কিন্তু পুজোর রীতিনীতি ঐতিহ্য আজও অপরিবর্তিত। মা দুর্গার পাশে থাকেন তাঁর দুই সখী জয়া, বিজয়া। মায়ের সঙ্গে পুজো পান তাঁরাও। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চার কুইন্টাল বেল কাঠ জ্বালিয়ে আহুতি দেওয়া হয়। সপ্তমী থেকে নবমী পরিবারের সদস্যরা গ্রামের সকলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোগ বিতরণ করেন। যদিও করোনা কালে বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখা হয়েছিল এই প্রথা। দশমীতে পরিবারের সদস্যরা পালন করেন বিশেষ প্রথা। ‘অপরাজিতা’ পুজোয় নীল অপরাজিতা ফুলের লতা হাতে পড়ে শান্তি জল নেন তাঁরা। ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামে বক্সী পরিবার আজও বহন করে চলেছে পুজোর ঐতিহ্য।