✍️ তপনকান্তি মাহাতো
দৈনন্দিন কাজে, সমস্যায় ভারাক্রান্ত মন, ক্লান্ত শরীরের ক্লান্তি দূর করার জন্য, মন ভালো করার জন্য মানুষ বারবার নির্জন প্রকৃতির কাছে ছুটে যেতে চায়। আবার কিছু মানুষ সেই নির্জনতাকে কাজে লাগিয়ে পর্যটকদের পরিষেবা দেওয়ার নামে ব্যক্তিগত মুনাফা লাভের জন্য সেই প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে, নির্জন জায়গাকে হাটে পরিনত করছে।
অধুনা জঙ্গলমহলে পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। আর পর্যটকদের এই আকর্ষনকে কাজে লাগিয়ে শহুরে ব্যবসায়ীরা জঙ্গলমহলের নির্জন পর্যটন স্থানগুলিতে বৈধ, অবৈধ ভাবে একাধিক লজ, গেষ্ট হাউস বানিয়ে জায়গাগুলির নির্জনতাই কেড়ে নেওয়ার উপক্রম। তারা নিজেদের ব্যবসার জন্য প্রাচীন গাছ কেটে,পাহাড় কেটে বাহারী আস্তানা বানাতে ব্যস্ত। এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, স্থায়ী বসবাসকারি মানুষের জনজীবনের ভারসাম্য এতে ভীষনভাবে কলুষিত হচ্ছে।
কাঁকড়াঝোড়, ঢাঙিকুসুম, আমলাশোলে এরকম ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েকটি ব্যবসাকেন্দ্র বানিয়ে হোম স্টে, ইকো ট্যুরিস্ট সেন্টার নাম দিয়ে ঘাঁটি গেড়েছেন।এরা কারা? এরা 99% কেউ কিন্তু জেলার লোকই নন। হোম স্টের সংজ্ঞাটাই আজ এরা বদলে দিচ্ছেন। হোম স্টের অর্থ তো ঐ এলাকাতে যাদের বাড়ী আছে সেই বাড়ীতে যদি কেউ পর্যটকদের রাখেন তবে সেটাই হোম স্টে। মানে বসত বাড়ির এক অংশ ভাড়া দিয়ে বাড়ির মালিক কিছু রোজগার করতে পারেন। তা আমলাশোলে আদিবাসীদের জমি হাতিয়ে জেলার বাইরের লোক ট্যুরিস্ট লজ বানালে তার নাম হোম স্টে হয় কি করে? বাইরের ব্যবসায়ীর রোজগার হলে এলাকার লোকের উন্নয়নটা কিভাবে হয়?
এভাবেই আদিবাসীদের লোভ দেখিয়ে বেশ কিছু জায়গা হাতিয়ে আরো কয়েকটা ট্যুরিস্ট লজ হয়েছে, আর কয়েকটা তৈরীর পথে। এরা কিন্তু প্রাকৃতিক, সামাজিক পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধ নয়, এদের লক্ষ্য মুনাফা কামানো। আর পর্যটকদের আপ্যায়নের জন্য গড়ে উঠছে মদের ঠেক। এসব গেস্ট হাউস বা হোম স্টে তে স্থানীয় মানুষ কি কাজ পায় বলতে পারেন? রাঁধুনী, রুম এটেনডেন্ট তো সেই শহর থেকেই আসে। প্রান্তিক রুখা, শুখা মানুষদের এসবে কাজ কোথায়। মাঝখান থেকে তাদের বিড়ম্বনা বাড়ে। তাই এসব নির্জন জায়গাতে পর্যটকদের পরিষেবা দেওয়ার নামে এসব ব্যবসা বন্ধ হোক। পর্যটকেরা বেলপাহাড়ী বা ঝাড়গ্রামে থাকুন, আর যদি ওসব জায়গাতে থাকার অনুমতি দিতেই হয় তবে সরকারি অতিথিশালা বা স্থানীয় গ্রামবাসীদের বাড়িতেই থাকতে হবে। সরকার বা স্থানীয়রা প্রকৃতি বা সমাজ জীবনের প্রতি দায়বদ্ধ,ব্যবসায়ীরা নন। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে পাহাড় জঙ্গলের যা দুর্দশা হবে তাতে আর কেউ এদিকে পা বাড়াতেই চাইবে না।