জঙ্গলমহলে “হাতী আর মানুষের সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা”ই হোক বিশ্ব পরিবেশ দিবসের স্লোগান

জঙ্গলমহলে "হাতী আর মানুষের সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা"ই হোক বিশ্ব পরিবেশ দিবসের স্লোগান

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্ব জুড়ে চলছে প্রকৃতি সুরক্ষার দাবি। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। যথেচ্ছ উন্নয়নের ধাক্কায় যেমন পরিবেশের স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনই জনবিস্ফোরনের চাপে ক্রমশ পিছু হচ্ছে স্বাভাবিক জঙ্গল। সমস্যায় পড়ছে বন্যপ্রাণ, সংকটে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল জুড়েও বিগত কয়েক বছরে সেই ছবিই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বিগত কয়েক বছরে বারবার শিরোনামে এসেছে জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম জেলাগুলি। সৌজন্যে হাতির দৌরাত্ম্য। বারবার আক্রান্ত হয়েছে মানুষ। মৃত্যুও হয়েছে একাধিক। হয়েছে সম্পদ হানি, বাড়ি ঘর লন্ডভন্ড, ক্ষেতের ফসল ধ্বংস। এলাকার মানুষজনের তরফে অভিযোগ উঠেছে বন দফতরের দিকে। কিন্তু পরিবেশবিদ ও জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনায় উঠে আসছে অন্য তথ্য। তাঁদের বক্তব্য, জন সংখ্যার বিপুল বৃদ্ধি ও তাদের বাসস্থানের, চাষ যোগ্য জমির চাহিদা মেটাতে কোপ পড়ছে জঙ্গলের গাছে। সংকুচিত হচ্ছে জঙ্গল। আর একটু একটু করে জঙ্গল সাফ করা জমি চলে যাচ্ছে মানুষ নামক দু’পেয়ে জীবের গ্রাসে। এতেই সমস্যায় পড়ছে হাতিরা। প্রকৃতির নিয়মে বহু বছর ধরে তাদের ব্যবহৃত করিডর, চারণ ভূমি দখল হওয়ায় অভাব আসছে খাদ্যের। মরিয়া হয়ে খাদ্যের সন্ধানে তারা তান্ডব চালাচ্ছে জঙ্গল-নিকটস্থ গ্রামগুলোতে। কখনও জঙ্গলে গিয়ে রোষের শিকার হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। আবার অনেক সময়েই দেখা যায় লোকালয়ে হাতি এলে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করছে। আতঙ্কে বা রেগে গিয়ে অনেক সময়ে হাতির দল ঢুকে আসছে জনবসতির দিকে অথবা আক্রমণ চালাচ্ছে। আবার বিভিন্ন সময়ে জঙ্গলমহলের জেলাগুলোতে সরকার ও পরিবেশ প্রেমীদের উদ্যোগে নতুন করে গাছ লাগানো ও জঙ্গলায়নের প্রকল্প ধাক্কা খাচ্ছে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষীর জন্য। রাতের অন্ধকারে কেটে পাচার হয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের ও প্রকল্পের গাছ। সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে, গ্রেপ্তার চালাচ্ছে, গ্রামবাসীরাও অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করছেন কিন্তু স্থায়ী সমাধানের দেখা নেই। হাতির আক্রমনের ক্ষেত্রে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে জনগণকে সাবধান থাকার জন্য এবং সেই সঙ্গে হয়তো আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্থদের ভাগ্য জুটছে সামান্য ক্ষতিপূরণ। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, ক্রমশ বেড়ে চলা এই মানুষ ও বন্যপ্রানের সংঘাতের সমাধান কোথায়!

আরও পড়ুন:  Elephant Attack: হরিয়াতাড়ায় হাতির হানা, ভাঙলো মাটির বাড়ি

আজ পরিবেশ দিবসে আমরা যখন পরিবেশে দূষণের প্রভাব, বাতাসে গ্রীন হাউস গ্যাসের বৃদ্ধি, বিশ্ব উষ্ণায়ন কিয়ে আলোচনা করছি তখন অরণ্য-সংকোচন ও জীববৈচিত্র্যতে তার প্রভাবও বিচার্য্য হওয়া উচিৎ। জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে একসময় খাদ্য নিরাপত্তা ছিল অন্যতম প্রধান সমস্যা। আজ তার কিছুটা সুরাহা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু খাদ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিচার করলে আমরা সর্বক্ষেত্রেই আমাদের তথা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিই চিন্তা করি। পশুদের বাসস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তার অধিকার বিষয়টি আইন ও খাতায় কলমে থাকলেও তা সাধারণের কাছে কতটা মান্যতা পায় সেই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। প্রকারান্তরে এই ভেদাভেদ অরণ্যচারী পশুদের সঙ্গে সমস্যায় ফেলছে মনুষ্য সভ্যতাকেও। কিছু ক্ষেত্রে প্রভাব তাৎক্ষণিক না হলেও সুদূর প্রসারি বটে। তাই পরিবেশ দিবসে জঙ্গলমহলে পরিবেশের নিরাপত্তা বজায় রাখতে ‘হাতী তথা পশু আর মানুষের সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা’ সুনিশ্চিত করাই প্রধানতম স্লোগান হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে সহাবস্থান গড়ে উঠুক অরণ্য, বন্যপ্রাণ ও মানুষের।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

হোম
জয়েন গ্রুপ
স্থানীয় খবর
জয়েন গ্রুপ
গুগল নিউজ