আমাদের বঙ্গদেশ নদীমাতৃক দেশ। কৃষিই অর্থনীতির মূলভিত্তি। আর সেই কৃষি জমির আশেপাশে বিষধর সাপেদের বাস। শীত পার হয়ে গরম পড়তে শুরু করলেই গর্ত থেকে শীত ঘুম ভেঙে বের হয়ে আসে তারা৷ এক সময় মেদিনীপুর সংলগ্ন গ্রামবাংলায় সর্পাঘাতে মৃত্যু ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সেই সাপের হাত থেকে বাঁচতেই সর্পদের দেবী মনসার পুজোর প্রচলন। মূলত কৃষিকাজ শুরুর আগে কৃষকেরা দেবী মনসার কাছে পুজো দিয়ে মরশুমের চাষের কাজ শুরু করতেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের মহিশা গ্রামের মনসা মন্দির বিশেষ রূপে বিখ্যাত। সারা বছর পুজো হলেও প্রতি বছর চৈত্রমাসে তৃতীয় মঙ্গলবার এখানে মনসা দেবীর মহাপুজোর আয়োজন করেন ভক্তরা৷ পুণ্যার্থীর দল সারা রাজ্য তথা দেশ থেকে সমবেত হন এখানে। বসে বড় মেলা। মহিশা গ্রামের মনসা মেলা গঙ্গাসাগর মেলার পর রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেলা।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়গপুর শাখার জকপুর ও মাদপুর স্টেশনের মাঝে মহিশা গ্রাম। সেখানেই বিখ্যাত ও প্রাচীন মনসা মন্দির। কথিত আছে, প্রায় চারশো বছর আগে জকপুরের জমিদার যোগেশ্বর রায় স্বপ্নাদেশ পান জঙ্গলে দেবী মনসার থানে পুজোর ব্যবস্থা করে মাহাত্ম্য প্রচারের। পরে জমিদার গিয়ে পাশের জঙ্গলে সাপের বাসা উইঢিপি ঘিরে প্রতিষ্ঠা করেন মনসা মন্দির৷ প্রতিষ্ঠিত হয় দেবীর মূর্তি। ব্যবস্থা হয় নিত্যপুজোর। সেই মন্দিরে এখনও দেবী নিত্যপূজা পান। আরও কথিত আছে, ব্রিটিশ আমলে সরকার মাদপুর থেকে জকপুর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করে। সেই সময় প্রস্তাবিত লাইন ছিল মনসা দেবীর থানের উপর দিয়েই। স্থানীয় মানুষদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে শ্রমিকরা জঙ্গল কাটতে প্রবৃত্ত হলে সর্পদংশনে একাধিক ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকের মৃত্যু হয়। এরপর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রস্তাবিত লাইন।
প্রতি বছর চৈত্রমাসে তৃতীয় মঙ্গলবার মনসা দেবীর থানে মহাপুজোর আয়োজন করেন ভক্তরা৷ বসে বড় মেলা। এই বছরেও এপ্রিল মাসের ৪ তারিখ হতে চলেছে দেবীর মহাপুজো। হবে বিপুল ভক্ত সমাগম। মনসা মেলার কারণে প্রায় ৮ লক্ষ পুণ্যার্থী যাতায়াত করবেন লোকাল ট্রেনে। এই পুণ্যার্থীদের সুবিধার জন্য আগামী ৪ ঠা এপ্রিল রাত ২ টো থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মাদপুর ও জকপুর স্টেশনে সমস্ত আপ ও ডাউন ইএমইউ লোকাল ট্রেন দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।