খাতায় কলমে সবুজ সংকেত মিলেছিল আগেই। এবার মঙ্গলবার মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক সভা থেকে মিলল ঘোষিত মান্যতা। ‘হেরিটেজ’ হল রানী শিরোমণি গড়, কর্ণগড়। প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “কর্ণগড় হেরিটেজ!” এছাড়াও একাধিক প্রস্তাব জেলাশাসককে ভেবে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ব্রিটিশ শাসনে দেশের প্রথম রাজনৈতিক বন্দিনী রানি শিরোমণি। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত কর্ণগড় হেরিটেজ তকমা ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের স্বীকৃতি পাক এই দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। বিগত তিন বছরে আন্দোলন তৈরি হয়েছিল ভালোবাসি কর্ণগড়, হেরিটেজ জার্নি, রানী শিরোমণি ঐক্য মঞ্চ সংগঠনের তরফে। তাদের তরফে শুরু হয়েছিল জনসমর্থন সংগ্রহের কাজ। সমাজমাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি হয়েছে ক্রমাগত ইতিহাস ভিত্তিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব নিয়ে লেখালেখি, দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র ও একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ, সমস্ত দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন চলেছে সমান তালে। দাবির স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষনা মুখ্যমন্ত্রী আগেই করেছিলেন। এবার জেলা সফরে মেদিনীপুর এসে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মঙ্গলবার ঘোষিত মান্যতা দিলেন তিনি।
সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কর্নগড়কে কেন্দ্র করে পশ্চিম মেদিনীপুরের পর্যটন বিষয়ে জোর দেওয়ার কথাও বলেছেন। সেই সঙ্গে ঐ এলাকায় পর্যটকদের থাকার জন্য হোম স্টে করার বিষয়েও জানিয়েছেন। জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ইতিমধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে হোম স্টে তৈরি করার জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পর্যটন দফতরের আধিকারিক জানিয়েছেন, জেলায় ৩০০ জন গাইড হিসেবে নথিভুক্তকরণের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের ট্রেনিংও হয়েছে। কর্নগড়ে থাকা মন্দিরটির পূজারীর পুরোহিত ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্যও প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে রাণী শিরোমণি গড়কে কেন্দ্র করে উন্নয়নমূলক কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে জেলাশাসককে কাজের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে রাণী শিরোমণি গড়ের হেরিটেজ আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ভালোবাসি কর্ণগড় সংগঠনের অন্যতম সদস্য নিসর্গ নির্যাস মাহাতোর লেখা ‘কর্ণগড়ের মর্যাদা’ বইটি সদ্য প্রকাশ করেছেন জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল, বিধায়িকা জুন মালিয়া ও মেদিনীপুরের পুরপ্রধান সৌমেন খান। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “রাণী শিরোমণি গড়ের হেরিটেজ তকমা ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্বীকৃতি আমাদের আবেদন ছিল। এই দিনটির জন্য আমরা মুখিয়েছিলাম। আজ আমরা আপ্লুত বললেও কম বলা হবে।” একই সঙ্গে নিজের বইয়ে হেরিটেজ আন্দোলনের দীর্ঘ কয়েক বছরের যাত্রাপথকে তুলে ধরার কথাও জানিয়েছেন তিনি।