Shovabazar Rajbari Puja : শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাঁকজমকের মিশেল

Shovabazar Rajbari Puja : শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাঁকজমকের মিশেল

দিন যাচ্ছে। ক্রমশ এগিয়ে আসছে দুর্গাপুজো (Durga Puja)। আর রাজ্যের বনেদি বাড়ির (Bonedi Barir Durga Puja) দুর্গাপুজো বললেই প্রথম সারিতে থাকে কলকাতার শোভাবাজার রাজবাড়ির (Shovabazar Rajbari) দুর্গাপুজো। যা একই সঙ্গে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাঁকজমকের মিশেল।

পলাশীর যুদ্ধের পর প্রথমবার ১৭৫৭ সালে রবার্ট ক্লাইভের জয় উদযাপন করতে নবকৃষ্ণ দেবের বাড়িতে হয় দুর্গাপুজো। আমন্ত্রিত হন রবার্ট ক্লাইভ সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ইংরেজরা৷ নবকৃষ্ণ উর্দু, আরবি, ফারসি সহ একাধিক ভাষার পারদর্শী ছিলেন। প্রথমে ব্রিটিশদের কুঠিতে কাজ ও পরে ওয়ারেন হেস্টিংসের ফারসি শিক্ষক। আরও পরে পুরো দস্তুর ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন তিনি। ব্যবসায়ী শোভারাম বসাকের আউটহাউজ কিনে তৈরি করে বাড়ি। ইংরেজদের আস্থাভাজন হয়ে উঠে ‘রাজা’ এবং পরে ‘বাহাদুর’ উপাধি পান। রাজা নবকৃষ্ণ দেবের বাড়ি পরিচিত হয় ‘শোভাবাজার রাজবাড়ি’ হিসেবে। প্রথমে অপুত্রক থাকায় নবকৃষ্ণ দত্তক নেন ভাইয়ের ছেলে গোপীমোহনকে। পরে তাঁর চতুর্থ স্ত্রী পুত্রসন্তান রাজকৃষ্ণের জন্ম দেন। নবকৃষ্ণ প্রাসাদতুল্য বাড়ি নির্মাণ করান পুত্র রাজকৃষ্ণের জন্য। সেই বাড়িতে পুজো শুরু হয় ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে। এখন দুই পুজো বড় তরফের ও ছোট তরফের পুজো হিসাবে বিখ্যাত৷

আরও পড়ুন:  Nadia Durga Puja : দেবী নবদ্বীপে রক্তবর্ণা! ‘লাল দুর্গা’র পুজো হয় ভট্টাচার্য বাড়িতে

বড় তরফের কাঠামো পুজো হয় রথযাত্রার দিন। ছোট তরফের পুজোর কাঠামো পুজো হয় উল্টোরথে। এই পুজোয় আগে সাজ আগে আসতো ডাকযোগে বিলেত থেকে, এই সাজ তাই ডাকের সাজ নামে পরিচিত। এখন কৃষ্ণনগরের শিল্পীরা প্রতিমা সাজান। যদিও সাজানো হয় পশ্চিমী শৈলির ঘরানায়। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী সাজেন রাংতার পোশাকে। কার্তিক ও গণেশের পরণে থাকে রণসাজ কাপড়৷ আগে খাঁটি রূপোয় পাতে আবৃত হতেন সিংহ। রুপোর আবরণ-সহই গঙ্গায় ফেলা হত সিংহকে। এখন রূপালি রং করা হয়। ধুনো থেকে তৈরি আঠা দিয়ে বুলনের কাজে দেবীর অলংকার তৈরি হয়। আগে সন্ধিপুজোয় কামান দাগা হন। এখন ধ্বনিত হয় ডাবল ব্যারেল শট গান। ছোট তরফের দুর্গাপুজোয় এখনও পাঁঠাবলি হয়। কিন্তু মায়ের ভোগ হয় সম্পূর্ণ নিরামিষ।

একসময় বিদ্যাসাগর, রামকৃষ্ণ, রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মনীষীরা এসেছেন এই পুজোয়। বিনোদনের জন্য কবির লড়াই, খেমটা, তরজা, টপ্পা, বাইনাচের এলাহি আয়োজন হতো। পুরোনো কলকাতার প্রবাদে বলা হয়, দেবী মহামায়া আমোদ করেন শোভাবাজার রাজবাড়িতে। তাই এখানে তিনি আমোদিনী। আগে দশমীতে নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানো হন। বন্যপ্রাণ আইনের জন্য এখন তা নিষিদ্ধ। তবে নীলকন্ঠ আঁকা ফানুস বিসর্জনের শোভাযাত্রার শুরুতে ও নৌকায় বিসর্জনের জন্য দেবীকে ওঠানোর পরে ওড়ানো হয়। বিশ্বাস, এই নীলকন্ঠ পাখি কৈলাসে মহাদেবকে খবর দেবে শিবলোকের উদ্দেশ্যে মহামায়ার যাত্রাশুরুর৷

আরও পড়ুন:  Burdwan Puja : হরগৌরী রূপে গোস্বামী মতে বড়শুলের দে বাড়িতে পুজো পান দেবী

২৬৫ বছরের ইতিহাসে শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো বিবর্তন দেখেছে বিস্তর। এখন পরিবারের সদস্যরা দেশে বিদেশে ছড়িয়ে। যদিও পুজোর সময় এক হন সকলে। পুজো পরিচালনার জন্য গঠিত হয়েছে ট্রাস্ট। ট্রাস্টের পরিচালনাতেই পুজো চলে এখন। রাজত্ব ফুরিয়েছে, অথচ জাঁকজমক জৌলুস বজায় রাখার দায় বর্তমান। তা নিয়ে বর্তমান সদস্যদের মধ্যে মতের অমিলও বিস্তর৷ তবুও ইতিহাস ও কলকাতার বাবু ঐতিহ্যের স্মৃতি হয়ে ‘শোভাবাজার রাজবাড়ি’তে মা আসবেন পুজো নিতে৷

হোম
জয়েন গ্রুপ
স্থানীয় খবর
জয়েন গ্রুপ
গুগল নিউজ